অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায় - কি খেলে শরীর ঠান্ডা হবে
গ্রীষ্মকালীন রৌদ্রতাপ মানুষের শরীরকে অতিমাত্রায় গরম করে তুলে, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই ক্রান্তিকর। অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায় এবং কি খেলে শরীর ঠান্ডা হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব নিচে
অতিরিক্ত গরম বাতাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং শরীরকে সতেজ ও সচল রাখতে কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। এই প্রবন্ধে আমরা উষ্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় তুলে ধরব।
পেজ সূচিপত্র ঃ অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায় - কি খেলে শরীর ঠান্ডা হবে
- শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ
- শরীর গরম থাকা কিসের লক্ষণ
- অতিরিক্ত গরমে কি কি সমস্যা হয়
- মেয়েদের শরীর গরম থাকে কেন
- শরীর গরম হলে কি খাওয়া উচিত
- শরীর গরম হলে ঠান্ডা করার উপায়
- শরীরের গরম কমানোর উপায়
- অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায়
- প্রচন্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার উপায়
- কি খেলে শরীর ঠান্ডা হবে
- লেখক এর মন্তব্যঃ অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায় - কি খেলে শরীর ঠান্ডা হবে
শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ
অতিরিক্ত গরম লাগার কারণসমূহ
মানব শরীর একটি অদ্ভুত জটিল ব্যবস্থা। শরীরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা উভয়ই শরীরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষতিকর। স্বাভাবিক শরীর তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে কিছুটা বেশি কম হলেই মানুষ অতিরিক্ত গরম লাগা অনুভব করে। এর বিভিন্ন কারণ নিম্নরূপ:
উচ্চ তাপমাত্রা অতিরিক্ত গরম হওয়ার একটি কারণ
গ্রীষ্মকালে বা খুব গরম আবহাওয়ায় থাকলে মানুষ অতিরিক্ত গরম লাগা অনুভব করে। এছাড়া যেসব কারখানা বা জায়গায় উচ্চ তাপমাত্রা থাকে সেখানেও কর্মীরা সহজেই গরম অনুভব করতে পারে। বেশ, উচ্চ তাপমাত্রা জনিত অতিরিক্ত গরম লাগার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। উচ্চ বাহ্যিক তাপমাত্রা মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রভাব ফেলে।
যখন পরিবেশের তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হয়,তখন শরীর গরম বজায় রাখতে বেশি শক্তি ব্যয় করে। এর ফলে রক্তনালিকাগুলি প্রসারিত হয়ে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে গরম লাগার অনুভূতি হয়। গ্রীষ্মকালের উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা মানুষের শরীরে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।ঘর্মনা বৃদ্ধি: উচ্চ তাপমাত্রায় শরীর অতিরিক্ত ঘাম ছাড়ে। এটি শরীরের জলাংশ হ্রাসের এক প্রধান কারণ। ফলে শরীরে পানীয়শোষণ হ্রাস পায় এবং শরীর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
রক্তচাপ বৃদ্ধি: উচ্চ তাপমাত্রায় রক্তনালিকাগুলি প্রসারিত হওয়ায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। যা অতিরিক্ত গরম লাগার অনুভূতি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। দেহজল ক্ষতি: দীর্ঘক্ষণ উচ্চ তাপমাত্রার সম্মুখীন হওয়ার ফলে শরীরের দেহজল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় শরীর গরম লাগা উপসর্গটি অনেকটা বেশি প্রকট হয়ে ওঠে।
পেশী বিকল: উচ্চ তাপ পেশীর কোষগুলিকে বিকৃত করতে পারে। ফলে পেশীগুলি শক্তিহীন ও দুর্বল হওয়ায় আরও অধিক গরম উপসর্গ অনুভূত হয়। মস্তিষ্কে প্রভাব: খুব উচ্চ তাপমাত্রায় মস্তিষ্কের কার্যক্রম বিপর্যস্ত হতে পারে এবং আঘাত বা মস্তিষ্ক আক্রান্তের লক্ষণ হিসাবে মস্তিষ্ক গরম হয়ে উঠতে পারে।
আরো পড়ুনঃ নাশপাতির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
এছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রায় মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্রে, গৃহস্থালীতে অথবা ক্রীড়াঙ্গনে উচ্চ তাপমাত্রায় থাকা মানুষের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট পরিমাণ তরল পান করা, বিশ্রাম নেওয়া এবং উপযুক্ত শীতল পরিবেশ বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্যথায় এটি গরম আঘাত, হাইপারথার্মিয়া বা অন্যান্য উচ্চ জ্বরজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে।
পরিশ্রম
কঠিন শারীরিক পরিশ্রম করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ফলে গরম লাগে। যেমন অধিক পরিমাণে ব্যায়াম বা খুব ভারী শারীরিক পরিশ্রম করতে হলে। নিশ্চয়ই, পরিশ্রম জনিত অতিরিক্ত গরম লাগার বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। মানব শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য প্রয়োজন হয় শক্তি বা এনার্জি।
এই এনার্জি আসে খাদ্য থেকে। কিন্তু যখন মানুষ শারীরিক পরিশ্রম করে, তখন শরীরকে অতিরিক্ত এনার্জির প্রয়োজন হয়। এই অতিরিক্ত এনার্জি উৎপন্ন হয় শক্তিশালী অক্সিজেন পরিবহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যা তাপ উত্পন্ন করে। এই তাপই শরীরে গরম লাগার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। কারো পরিশ্রম যতই বেশি হবে, ততই বেশি শক্তি বা তাপ উত্পন্ন হবে। কারণ কঠিন শারীরিক পরিশ্রমে শরীরের মাংসপেশীগুলি খুব বেশি শক্তির ব্যবহার করে এবং অধিক পরিমাণ তাপ নির্গত হয়। যেমন:
ক্রীড়া বা খেলাধুলা: ক্রীড়াবিদরা বা খেলোয়াড়রা অনবরত ব্যায়াম করে থাকায় তাদের শরীরে প্রচুর তাপ নির্গত হয়। অনেকে গরম লাগা প্রশমনের জন্য কোল ড্রিংক গ্রহণ করে। নির্মাণ কাজ: ভারী নির্মাণ শ্রমিকদের বেশী শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়, যার ফলে তাদের শরীরে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় এবং বেশি গরম লাগে। বহন কাজ: বস্তা, মালামাল বহন জাতীয় কাজে মজুররা প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রম করে, যা তাদের শরীরে বেশি গরম উত্পন্ন করে।
ক্রীড়া প্রশিক্ষণ: অনুশীলন বা প্রশিক্ষণের সময় খেলোয়াড় বা সৈনিকরা কঠিন ব্যায়াম করে থাকে, যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত গরম সৃষ্টি হয়। কৃষিকাজ: সারাদিন কৃষিজমিতে কাজ করায় চাষীদের দেহে চরম গরম লাগে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ভারী মালামাল বহন, পাথর ভাঙ্গা, কয়লা খনন অথবা যেকোনো কঠিন শারীরিক পরিশ্রমের সময় শরীরের মাংসপেশীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত তাপ সৃষ্টি হয়।
এই অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা পেতে বিশ্রাম নেওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, হালকা পরিধেয় পোশাক পরা এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করণ প্রয়োজন। নতুবা শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকায় গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোগ বালাই
কিছু রোগ বা অসুস্থতার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন- জ্বর, সংক্রমণ, প্রদাহ আদি। বেশ, রোগ বা অসুস্থতা জনিত অতিরিক্ত গরম লাগার বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।মানব শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে শরীরের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কিছু রোগ বা অসুস্থতার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ফলে মানুষ অতিরিক্ত গরম লাগার অভিযোগ করে। এর কারণগুলি হলো:
- জ্বরজনিত রোগ: জ্বর মানব শরীরের প্রাথমিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। শরীরে সংক্রমণ বা রোগজীবাণু প্রবেশ করলে শরীর জ্বরের মাধ্যমে তা দমন করার চেষ্টা করে। ফলে মানুষ বেশি গরম লাগার অনুভূতি পায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগে জ্বর দেখা যায়।
- প্রদাহজনিত রোগ: শরীরের কোনো অঙ্গে বা টিসু্যতে প্রদাহ দেখা দিলে সে অঞ্চলে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা অতিরিক্ত গরম লাগার অনুভূতি জন্মায়। অ্যাপেনডিসাইটিস, গলা প্রদাহ, চর্মরোগ ইত্যাদিতে এরকম ঘটে।
- অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া: কিছু মানুষের শরীর বিভিন্ন উপাদান বা পদার্থে সংবেদনশীল হয়। এই ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, খাদ্যদ্রব্য, বায়ুদূষণ, গাছপালার রেণু প্রভৃতির প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে।
- অন্যান্য জটিল রোগ: ক্যান্সার, লুপাস, রয়েল আর্থ্রাইটিস বা অটোইমিউন ডিজいস ইত্যাদি রোগে শরীরের জটিল প্রতিক্রিয়া ঘটে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- ভাইরাস সংক্রমণ: ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যেমন হার্পিস, সামান্য সর্দি-কাশিতেও শরীরের প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক।
- চর্ম সংক্রান্ত রোগ: ফোস্কা, চর্মরোগ বা চর্মের প্রদাহজনিত অন্যান্য রোগে শরীরের তাপমাত্রা উচ্চ স্তরে থাকা সম্ভব।
অতিরিক্ত গরম লাগার সময় দেহজল ক্ষতির হার বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ তাপমাত্রা বজায় থাকলে শরীরের ওজন হ্রাস ঘটতে পারে এবং কয়েকটি গুরুতর স্বাস্থ্যসমস্যাও দেখা দিতে পারে। সুতরাং রোগ জনিত অতিরিক্ত গরম লাগার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণে শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণসমূহ
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাধিক প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অতিরিক্ত গরম লাগা। যদিও মানসিক চাপ আসলে শারীরিক রোগ নয়, তবুও এটি শরীরের কার্যক্রম বিপর্যস্ত করে এবং বিভিন্ন রকম শারীরিক লক্ষণের কারণ হিসেবে কাজ করে। মানসিক চাপজনিত অতিরিক্ত গরম লাগার বিভিন্ন কারণ নিম্নরূপ:
হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ চাপের অবস্থায় মস্তিষ্ক কর্টিসল, নোরাড্রেনালিন এবং অন্যান্য হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলি শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটায়। মেটাবলিক হার বৃদ্ধি মানসিক চাপের কারণে মেটাবলিক রেট বা শরীরের পচনশক্তি বৃদ্ধি পায়। এতে শরীরের কোষগুলি আরও বেশি শক্তি ব্যয় করে এবং অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয়।
আরো পড়ুনঃ আপেল খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
রক্তচাপ বৃদ্ধি উদ্বেগের অবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যায়, রক্তনালিকাগুলি প্রসারিত হয় এবং রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। যা অতিরিক্ত গরম লাগার এক প্রধান কারণ। ঘাম নির্গমন বৃদ্ধি চাপজনিত অবস্থায় ঘাম বেশি পরিমাণে নির্গত হয় এবং জলহরণের হার বাড়ায়, যার ফলে দেহজল ক্ষতি হয় ও গরম লাগা বাড়ে। পেশীর টানাপোড়েন উদ্বেগ ও চাপের অবস্থায় মানুষের পেশীসমূহ টনটনে ভাব ধারণ করে।
পেশীর এই টানাপোড়েন ও সঙ্কোচন অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত গরম উৎপন্ন হয়। শ্বাসকষ্ট চাপজনিত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি পেলে শরীর আরও বেশি শক্তি নষ্ট করে এবং অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয়।ঘুমের সমস্যা চাপের কারণে ঘুমের সমস্যা হলে তা শরীরে ক্লান্তি সৃষ্টি করে এবং ঘুমের ঘাটতি থাকায় শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
এগুলি মানসিক চাপেরই কিছু ফলাফল মাত্র যা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটিয়ে অতিরিক্ত গরম লাগার অনুভূতি জন্মায়। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে এবং গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। অতএব, মানসিক চাপ দূরীকরণের মাধ্যমে শরীরকে স্বাভাবিক রাখা উচিত।
হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে নারীদের শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগা
কিশোরী বয়স, গর্ভাবস্থা আর বয়োনিবৃত্তি এসব সময়ে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে কিছু কিছু মহিলা অতিরিক্ত গরম অনুভব করেন। নারীদের জীবনে বিভিন্ন সময় তাদের শরীরের হরমোনাল গঠন পরিবর্তিত হয়। যেমন- কিশোর বয়স, গর্ভাবস্থা এবং রজঃনিবৃত্তির সময়। এই সময়গুলোতে হরমোনাল বৈপরীত্যের কারণে নারীরা সাধারণত অতিরিক্ত গরম লাগার সমস্যার সম্মুখীন হন। এর কারণসমূহ নিম্নরূপ:
কিশোর বয়স
শারীরিক পরিবর্তন: কিশোরী বয়সে নারীদের শরীরের হরমোনগত কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। এই সময়ে এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা শরীরের তাপসঞ্চালন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন: রেগুলেটরী সিস্টেমের পরিবর্তনের কারণে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের উপর প্রভাব পড়ে এবং অতিরিক্ত গরম লাগা লক্ষণ দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থা
হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন হরমোনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এটা তাপ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। বেশি রক্তসঞ্চালন: গর্ভাবস্থায় রক্ত সঞ্চালনের হার বেড়ে গিয়ে শরীরের জটিল অংশসমূহে অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ ঘটে এবং গরম লাগার অনুভূতি হয়।বাড়তি ওজন: গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধির কারণে শরীরে এক্সট্রা পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়, ফলে তাপ বেড়ে যায়।
মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি
হরমোনাল ঘাটতি: মেনোপজের সময় এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন হরমোনের স্তর ক্রমশ কমে যায়, যা শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে। হটফ্ল্যাশ: হরমোনাল পরিবর্তনের প্রধান লক্ষণ হটফ্ল্যাশ বা মুখমণ্ডলের গরম ও লালচে অবস্থা। এটি এস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবজনিত। সামাজিক চাপ: মেনোপজে নানা রকম মানসিক ও শারীরিক সমস্যার কারণে নারীরা চাপের মধ্যে থাকেন, যা অতিরিক্ত গরম লাগার অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়।
জরায়ুর কার্যকারিতায় প্রভাব: কিশোর বয়স, গর্ভাবস্থা ও রজঃনিবৃত্তির সময় হরমোনাল পরিবর্তন জরায়ুর কার্যকারিতা বিঘ্নিত করে। ফলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ওপর প্রভাব পড়ে। মেটাবলিজম পরিবর্তন: হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে মেটাবলিক রেট বা শরীরের পচনক্রিয়া বদলে যায়। এতে আরও বেশি তাপ নির্গত হয়।
পেশীর কার্যকারিতা কমে: হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মাংসপেশীর কার্যকারিতা কমে যায় এবং তাপনিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়। অ্যাংজাইটি ও অবসাদ: এই সময়ে হরমোনাল বৈষম্য থেকে অ্যাংজাইটি ও অবসাদের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে ও অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে। অনিদ্রা: রাতে অনিদ্রা বা ঘুমহীনতার সমস্যা হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে, যা শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
চর্মগত পরিবর্তন: হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে চর্মের কঠিনতা বৃদ্ধি পায়, ফলে এতে শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়ে। হরমোনাল থেরাপি: কিছু হরমোনাল থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
তাই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে হরমোনাল পরিবর্তন শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে এবং ফলে নারীরা অতিরিক্ত গরম লাগার সমস্যায় ভোগেন। এই সময়গুলোতে পানি পর্যাপ্ত পান করা, শান্ত পরিবেশে থাকা, ঠাণ্ডা জায়গায় বসা এবং প্রয়োজনে হরমোনাল থেরাপি গ্রহণ করা যেতে পারে।
একইসাথে নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অতিরিক্ত গরম লাগার সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই হরমোনাল পরিবর্তনগুলি মানব শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া, ম্যাটাবোলিজম এবং রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এবং তাই নারীরা এই সময়গুলোতে অতিরিক্ত গরম লাগার সমস্যায় ভোগেন। উপযুক্ত চিকিৎসা, লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই সমস্যাটি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগা
ওষুধের সাইড ইফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকেই অতিরিক্ত গরম লাগার সমস্যায় ভুগতে থাকেন। ওষুধের আন্তঃক্রিয়া শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে গরম লাগার সমস্যা তৈরি করে। এর কারণগুলি হলো:
- উত্তেজনাবর্ধক ওষুধ: ম্যাথইলফেনিডেট ও এম্ফেটামিন ধরনের উত্তেজনাবর্ধক ওষুধগুলি মস্তিষ্ক থেকে নরঅ্যাডরেনালিন ও ডোপামিন হরমোনের নির্গমন বৃদ্ধি করে, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
- অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ: আমিট্রিপটিলিন, ক্লোমিপ্রামিন ইত্যাদি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিরিক্ত গরম লাগা লক্ষণ দেখা যায়।
- অ্যান্টিপসাইকোটিক ওষুধ: ক্লোরপ্রোমাজিন, হযালোপেরিডোল ইত্যাদি অ্যান্টিপসাইকোটিক ওষুধের সাইড ইফেক্ট হিসেবে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- এনজাইম গঠন ত্রুটি: ওষুধপ্রভাব কিছু লোকের মধ্যে এনজাইম গঠনে ত্রুটি সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা অতিরিক্ত গরম অনুভব করেন।
- হরমোনাল বৈপরীত্য: কিছু ওষুধ মানব দেহের ইনসুলিন, থায়রয়েড, এস্ট্রোজেন প্রভৃতি হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রায় পরিবর্তন ঘটায়, যা শরীরে গরম লাগার কারণ হতে পারে।
- দেহজল ক্ষতি: বেশিরভাগ ডায়ুরেটিক বা প্রস্রাবকারী ওষুধ শরীর থেকে তরল পদার্থের নির্গমনকে বাড়িয়ে তোলে। যার ফলে দেহজল ক্ষতি ঘটে এবং গরম লাগার সমস্যা দেখা দেয়।
- প্রদাহজনিত রোগ: আনাবলিক স্টেরয়েড, ভিটামিন ও খনিজ লবণ পরিপূরক আকারে গ্রহণ করলে শরীরে চুলকানি, প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- থার্মোরেগুলেটরি বিপর্যয়: মাদকদ্রব্য, পরিচর্যামূলক ভিটামিন ও মাদক বিষয়ক অনেক ওষুধ শরীরের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটায়।
অতএব, ওষুধ গ্রহণের সময় এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যদি গরম লাগার সমস্যাটি বেশিদিন স্থায়ী হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এক পার্শ্ব থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
পুষ্টিহীনতা জন্য অতিরিক্ত গরম লাগে
শরীরে ভিটামিন বা খনিজ লবণের ঘাটতি থাকলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে ভিটামিন বি ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে। পুষ্টিহীনতা এবং গরম লাগার মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। আসুন এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করি।
পুষ্টিহীনতা এবং গরম লাগার সম্পর্ক
পুষ্টিহীনতা হল একটি অবস্থা যেখানে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বিভিন্ন রোগের আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়। একজন পুষ্টিহীন ব্যক্তির শরীরে গরম লাগার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ পুষ্টিহীনতার কারণে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই সংক্রমণের শিকার হয়।
গরম লাগা হল একটি জীবাণু সংক্রমণ যা শরীরের রক্তপ্রবাহে ঢুকে পড়ে এবং জ্বর এবং অন্যান্য লক্ষণগুলি দেখা দেয়। পুষ্টিহীন ব্যক্তিদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা সহজেই এই সংক্রমণের শিকার হন। বিশেষ করে খাদ্য অভাব, প্রোটিন এবং ভিটামিন গ্রহণের অভাব থাকলে গরম লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পুষ্টিহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
পুষ্টিহীনতা থেকে মুক্তি পেতে হলে সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজ লবণ সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিশেষ করে প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিতে হবে।
যথেষ্ট ঘুম, শারীরিক পরিশ্রম এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। পুষ্টিহীনতা দূর করতে পারলে গরম লাগার মতো সংক্রমণমুক্ত থাকা সম্ভব হবে।একজন পুষ্টিহীন ব্যক্তি উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা পালন করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
অবরোধযুক্ত পোশাক এবং গরম লাগার সম্পর্ক
অনেকে অনির্দিষ্টকালীন সময় থমথমে অবরোধযুক্ত পোশাক পরিধান করে থাকে, যা শরীরের তাপ বাইরে যেতে বাধা দেয়, ফলে গরম অনুভূত হয়। নিচে একটি আর্টিকেল রয়েছে যেখানে অবরোধযুক্ত পোশাক এবং গরম লাগার সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে:
অবরোধযুক্ত বা অনাবশ্যক বেশি পোশাক পরিধান গরম লাগার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অবরোধযুক্ত পোশাক বলতে বোঝায় এমন পোশাক যা শরীরের স্বাভাবিক বাতাসচলাচল বাধাগ্রস্ত করে এবং ঘামের নিষ্কাশনকে প্রতিরোধ করে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং বাক্টেরিয়া বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়।
গরম লাগা হল একটি জীবাণুজনিত সংক্রামক রোগ যা রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং জ্বর, কাশি, বমি-আমাশা এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়। গরম লাগার প্রধান কারণ হল স্ট্রেপটোকোকাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া গরম ও আর্দ্র পরিবেশে দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করে। অবরোধযুক্ত পোশাক পরার কারণে শরীরের তাপ নিষ্কাশিত হতে না পেরে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুনঃ সজনা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা
এই গরম ও আর্দ্র পরিবেশ স্ট্রেপটোকোকাস ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির জন্য অনুকূল হয়। ফলে শরীরে গরম লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাধারণত গরম মৌসুমে অবরোধযুক্ত পোশাক পরলে এই সমস্যা দেখা দেয়। অবরোধযুক্ত পোশাক বর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষত গরম মৌসুমে হালকা এবং শরীরের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এতে শরীরের স্বাভাবিক বাতাসচলাচল এবং ঘাম নির্গমন বাধাপ্রাপ্ত হবে না। ফলে গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস পাবে। সুতরাং, অবরোধযুক্ত পোশাক পরিহার করা এবং শরীরের তাপ নিষ্কাশন নিশ্চিত করার মাধ্যমে গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
অ্যালকোহল সেবন করলে যেসব কারণে গরম লাগে
অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তা পানীয়শোষণ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায় এবং শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে। অ্যালকোহল সেবন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। গরম লাগা হল একটি জীবাণুজনিত রোগ যা স্ট্রেপটোকোকাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলি হল জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা এবং বমি-আমাশা।
অ্যালকোহল সেবন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিভাবে দুর্বল করে তা নিম্নরূপঃ
অ্যালকোহল শরীরের হোয়াইট ব্লাড সেল বা লিউকোসাইটগুলির সংখ্যা কমিয়ে দেয়। লিউকোসাইটগুলি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। অ্যালকোহল এদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। অ্যালকোহল শরীরের প্রধান অ্যান্টিবডি উৎপাদনকারী কোষগুলিকে (বি-সেল) দুর্বল করে।
ফলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল অ্যান্টিবডি তৈরি করতে না পারায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অ্যালকোহল সিস্টেমিক ইনফ্লেমেশন বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ সারা শরীরে প্রদাহরোধী সাইটোকাইন উৎপাদন বেড়ে যায়। এটি শরীরের সাধারণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে আরও দুর্বল করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
সুতরাং অ্যালকোহলের অপব্যবহার বা অতিরিক্ত সেবন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং গরম লাগা, নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে। পরিমিত অ্যালকোহল সেবন নিরাপদ হলেও, অতিরিক্ত সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
থায়রয়েড সমস্যা
থায়রয়েড গ্রন্থি হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণের কারণে শরীরে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হতে পারে। থাইরয়েড সমস্যাগ্রস্থ রোগীদের প্রায়শই এরকম অনুভূতি হয়।থায়রয়েড গ্রন্থি হল শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। থায়রয়েড সম্পর্কিত সমস্যাগুলি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে এবং গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
হাইপোথায়রয়েডিজম অথবা থায়রয়েড হরমোনের অভাব শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিম্নরূপ প্রভাবিত করেঃ
- থায়রয়েড হরমোনের অভাব নিউট্রোফিল নামক সাদা রক্তকণিকার সংখ্যা হ্রাস করে, যা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য রোগাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- এটি অ্যান্টিবডি উৎপাদনকে দুর্বল করে এবং সাইটোকাইন নামক রাসায়নিক দ্রব্যগুলির সঠিক বিকাশ ঘটায় না, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- থায়রয়েড হরমোন অভাব রক্তপ্রবাহ হ্রাস করে এবং রোগাণু সহজেই শরীরের সার্বিক অবস্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হাইপারথায়রয়েডিজম অথবা থায়রয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নিম্নরূপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেঃ
- এটি রক্তের জিবাণুনাশক ক্ষমতাকে হ্রাস করে এবং শরীরে সহজে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেয়।
- হাইপারথায়রয়েডিজম রোগীদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল এবং ভাইরাল সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
- এটি শরীরের প্রতিরোধ কোষগুলির প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করে এবং তাদের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।
সুতরাং, থায়রয়েড সমস্যাগুলি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে এবং গরম লাগা, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। থায়রয়েড ঠিক রাখার জন্য সঠিক চিকিৎসা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরি। রোগীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে, থায়রয়েড সমস্যা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখলে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। নিয়মিত চিকিৎসা এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে থায়রয়েড সমস্যা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ডায়াবেটিস:
ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের অপরিচালিত ইনসুলিন ও গ্লুকোজ স্তরের কারণে অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে। এটি ডায়াবেটিসের প্রারম্ভিক লক্ষণও হতে পারে। ডায়াবেটিস হল একটি জটিল রোগ যা শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন বা ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে। এই রোগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকিকে বৃদ্ধি করে।
গরম লাগা হল একটি সংক্রামক রোগ যা স্ট্রেপটোকোকাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। এর প্রধান লক্ষণগুলি হল জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি এবং বমি-আমাশা। ডায়াবেটিসরোগীরা নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য গরম লাগার বেশি ঝুঁকিতে থাকেনঃ
ডায়াবেটিসে শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনের সমস্যা থাকায় শরীরের নিউট্রোফিল নামক সাদা রক্তকণিকার প্রতিক্রিয়াশীলতা কমে যায়। নিউট্রোফিলগুলি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।ডায়াবেটিসরোগীদের রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা থাকে। উচ্চ শর্করা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে এবং সংক্রামকের প্রতিক্রিয়াশীলতাকে বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিসে শরীরের সাইটোকাইন উৎপাদন ব্যাহত হয়, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিসরোগীদের রক্তপ্রবাহ হ্রাস পায়, যা শারীরিক ক্ষতস্থান এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রোগাণুর সঞ্চালনকে বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিসরোগীদের ক্ষত বা চর্মরোগ দ্রুত সুস্থ হয় না, যা সংক্রমণের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও, ডায়াবেটিসরোগীদের রক্তে যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা এবং কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো শারীরিক সমস্যা থাকলে তারা আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। সুতরাং, ডায়াবেটিসরোগীদের জন্য গরম লাগা বা অন্যান্য সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এই রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা এবং নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে তাদের সংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।
হৃদরোগ এবং গরম লাগার সম্পর্ক
হৃদরোগের কারণে শরীরের রক্তচলাচল বাধাগ্রস্থ হলে শরীরে অতিরিক্ত তাপ জমা পড়তে পারে এবং গরম লাগার অনুভূতি হতে পারে। হৃদরোগীরা গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন কারণ হৃদরোগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে। গরম লাগা স্ট্রেপটোকোকাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এর প্রধান লক্ষণগুলি হল জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি ও বমি-আমাশা।
হৃদরোগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য দুর্বল করে:
- হৃদরোগের কারণে রক্তপ্রবাহ ঠিকমতো না হওয়ায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যথেষ্ট রক্ত এবং অক্সিজেন পৌঁছায় না। এতে করে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- হার্ট ফেইলিউর বা হৃদযন্ত্রের দুর্বলতার কারণে শরীরের নিউট্রোফিল নামক সাদা রক্তকণিকার প্রতিক্রিয়াশীলতা কমে যায়। নিউট্রোফিলগুলি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে শরীরের অ্যান্টিবডি উৎপাদন হ্রাস পায়। অ্যান্টিবডিগুলি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- হৃদযন্ত্রের দুর্বলতার কারণে শরীরের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, যা সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে।
- উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য হৃদরোগের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ায় সেখানে রোগাণু সহজেই আক্রমণ করতে পারে।
- হৃদযন্ত্রের দুর্বলতার কারণে শরীরের এনার্জির উৎসগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা নিচে নেমে আসে।
এছাড়াও, হৃদরোগীদের অনেকেই বয়স্ক এবং তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল থাকে। একই সময়ে হৃদরোগের জটিলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে তারা সহজেই সংক্রামক রোগের শিকার হতে পারেন। হৃদরোগীদের জন্য গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন্য তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে তারা সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমাতে পারবেন।
বিষাক্ত পদার্থ এবং গরম লাগার সম্পর্ক
রাসায়নিক বা অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে তা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে এবং অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ হতে পারে। বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। গরম লাগা স্ট্রেপটোকোকাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এর প্রধান লক্ষণগুলি হল জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, বমি-আমাশা ইত্যাদি।
বিষাক্ত পদার্থগুলি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিম্নলিখিত উপায়ে দুর্বল করতে পারেঃ
- বিষাক্ত পদার্থগুলি শরীরের নিউট্রোফিল নামক সাদা রক্তকণিকাগুলির কার্যকারিতাকে হ্রাস করে। নিউট্রোফিলগুলি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- এগুলি শরীরের অ্যান্টিবডি উৎপাদনকে প্রভাবিত করে এবং ফলে সংক্রামক জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- বিষাক্ত পদার্থগুলি শরীরের সাইটোকাইন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে।
- এগুলি শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ফলে সংক্রামক জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা হ্রাস পায়।
উদাহরণস্বরূপ, ভারী ধাতু বা কেমিক্যালের দীর্ঘস্থায়ী সংস্পর্শে আসা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে। এছাড়াও ধোঁয়া বা বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে আসলে শ্বাসপ্রশ্বাস সমস্যা হতে পারে এবং ফলে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসার পর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য সময় লাগতে পারে।
এই সময়ে গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে শরীর অসহায় থাকে। সুতরাং, বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা এবং নিরাপদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা সুরক্ষিত থাকবে এবং গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমে যাবে। যদি কোনো বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসতে হয়, তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
মেনোপজ এবং গরম লাগার সম্পর্ক
মেনোপজ হল নারীর জীবনের একটি প্রাকৃতিক অবস্থা যখন মাসিক রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে শরীরের হরমোন পরিবর্তনের কারণে নারীদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ঘাম আসা, রাতে ঘামাঘামি করা, চাপা গরম অনুভূতি, অস্থিরতা ইত্যাদি। মেনোপজের এই সময়কালীন অবস্থায় নারীদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তাদের গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মেনোপজের সময় গরম লাগার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণগুলি নিম্নরূপ:
- এস্ট্রোজেন হরমোনের স্তর কমে যাওয়ায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এস্ট্রোজেন হরমোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত।
- মেনোপজের সময় শরীরের প্রদাহরোধক সাইটোকাইন উৎপাদন কমে যায়, যা সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে হ্রাস করে।
- এই সময় থায়রয়েড হরমোন এবং অন্যান্য হরমোনের স্তরের পরিবর্তনের কারণে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
- মেনোপজের সময় মেটাবলিক দর এবং রক্তপ্রবাহ হ্রাস পেয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা প্রভাবিত হয়, যা সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- ঘুমের সমস্যা এবং চাপ বৃদ্ধির কারণে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিচে নেমে আসে।
সুতরাং, মেনোপজের সময় নারীদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ভাল খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও হরমোন সমন্বয় থেরাপি নেওয়া যেতে পারে। যদি কোনো সংক্রামক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ক্যান্সার এবং গরম লাগার সম্পর্ক
কিছু ধরণের ক্যান্সার রোগের লক্ষণ হিসাবে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে। ক্যান্সার হল এমন একটি রোগ যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। গরম লাগা স্ট্রেপটোকোকাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এর প্রধান লক্ষণগুলি হল জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, বমি-আমাশা ইত্যাদি।
ক্যান্সাররোগীদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণগুলি নিম্নরূপ:
- কিমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির কারণে শরীরের সাদা রক্তকণিকা এবং অন্যান্য প্রতিরোধ কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে।
- চিকিৎসার কারণে শরীরের অ্যান্টিবডি উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হয়, যা সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
- ক্যান্সার রোগীদের রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে হয় না, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রোগাণুর সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়।
- দীর্ঘস্থায়ী জটিলতার কারণে ক্যান্সার রোগীদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়।
- ক্যান্সার নিজেই শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে এবং ফলে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও, ক্যান্সার রোগীদের অনেকের বয়স বেশি থাকে, যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল থাকে। যদি রোগীদের অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে তাদের সংক্রামক রোগের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
সুতরাং, ক্যান্সার এবং তার চিকিৎসা উভয়ই শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করে এবং গরম লাগার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ক্যান্সার রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা এবং নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে তাদের সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
সুতরাং, শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণগুলি বিভিন্ন হলেও অনেকগুলিই রোগজনিত এবং কিছু কারণ আবার জীবনযাত্রা, পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাসজনিত। যদি কোনও ব্যক্তি এই সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে সঠিক চিকিৎসা ও পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি সমাধান করা সম্ভব।2
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার পেছনে বিভিন্ন রোগজনিত, পরিবেশগত এবং জীবনৈশলীগত কারণ থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এই অতিরিক্ত গরম সমস্যা দূর করা যায়।
শরীর গরম থাকা কিসের লক্ষণ
শরীর গরম থাকা একটি সাধারণ লক্ষণ যা নানা রোগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। তবে এটি সব সময় রোগের লক্ষণ নয়বা গুরুতর রোগের সঙ্কেত দেয় না। কখনও কখনও শরীর গরম হওয়ার পেছনে থাকতে পারে অন্যান্য ছোট কারণগুলো। আসুন জেনে নেওয়া যাক শরীর গরম থাকার কারণগুলো:
শরীর গরম থাকার প্রধান কারণগুলো:
ভাইরাল ইনফেকশন: সাধারণ ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু ইত্যাদি ভাইরাসজনিত রোগে শরীরে জ্বর এবং গরম থাকার লক্ষণ দেখা যায়। জ্বর শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন: বায়োটিক ডাই হওয়ার সময় উচ্চ জ্বর বা শরীর গরম থাকা অনেক সময় দেখা যায়। বায়োটিকের সাহায্যে শরীর এই ইনফেকশনগুলো দমন করে।
অ্যালার্জিক রিয়েকশন: ওষুধ বা অ্যালার্জেনের প্রভাবে শরীর গরম হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
- অটোইমিউন রোগ: রোগ বা লুপাস এরকম কিছু অটোইমিউন রোগে জ্বর অথবা গরম থাকার লক্ষণ দেখা যায়।
- ক্যান্সার: বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে জ্বর বা গরম থাকার লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
- ডিহাইড্রেশন: পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ায় শরীর ডিহাইড্রেটেড হলে উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটতে পারে।
- রোদে বেশি থাকা: খুব বেশি সময় রোদে থাকলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
- অভ্যন্তরীণ হরমোনাল পরিবর্তন: রজঃস্রাব, গর্ভাবস্থা বা বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে শরীর গরম হতে পারে।
- ব্যায়ামের প্রভাব: ব্যায়ামের সময় গতিশীল থাকার কারণে শরীরের উষ্ণতা বাড়ে।
শরীর গরম থাকার বিভিন্ন কারণ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি কোন সাধারণ রোগের লক্ষণ মাত্র। কিন্তু যদি গরম অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য উপসর্গগুলো যেমন- শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এগুলো কোন গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে।
এছাড়া শরীর গরম থাকলে নিজেকে শীতল রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল পান করতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে। যদি অসুস্থতা বৃদ্ধি পায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণভাবে ওষুধ ছাড়াই এই উপসর্গ কিছুদিনের মধ্যে দূর হয়ে যায়। তবে যদি জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অতিরিক্ত গরমে কি কি সমস্যা হয়
অতিরিক্ত গরম অর্থাৎ হাইপারথার্মিয়া একটি জীবন-বিপন্ন অবস্থা যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি মানুষের শরীরের সাধারণ তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। শরীরের তাপমাত্রা যখন 104°F (40°C) এর বেশি হয়ে যায়, তখন তা হাইপারথার্মিয়া বলে বিবেচিত হয়। অতিরিক্ত গরম শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। নিচে হাইপারথার্মিয়ার কারণ এবং ফলাফলগুলো আলোচনা করা হলোঃ
কারণসমূহঃ
- পরিবেশগত উত্তাপঃ অত্যধিক গরম আবহাওয়া বা পরিবেশ যেমন- তাপ তরঙ্গ, নিরাপদ আশ্রয় না থাকা ইত্যাদি।
- শারীরিক পরিশ্রমঃ অতিরিক্ত শারীরিক কাজকর্ম যেমন- ক্রীড়া, খনন ইত্যাদি।
- রোগবাহী ইনফেকশনঃ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের কারণে যেমন- ম্যালেরিয়া, লেপটোস্পাইরোসিস ইত্যাদি।
- অ্যানেসথেসিয়ার প্রভাবঃ কিছু অ্যানেসথেটিক ওষুধ থার্মোরেগুলেটরি মেকানিজম নষ্ট করে।
- অন্যান্য রোগঃ যেমন- ম্যালিগন্যান্ট হাইপারথার্মিয়া, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ইত্যাদি।
ফলাফলসমূহঃ
- মস্তিষ্কে ক্ষতিঃ হাইপারথার্মিয়া মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে যা মস্তিষ্কে স্থায়ী আঘাত করতে পারে। এটি ফলে তীব্র মাথাব্যথা, জ্ঞান লোপ, বমি বমি ভাব এবং যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে মৃত্যুও হতে পারে।
- হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাবঃ হাইপারথার্মিয়া হার্ট রেট বৃদ্ধি করে এবং কার্ডিওভাসকুলার তরলপাথের ডিহাইড্রেশন ঘটায়। এটি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
- কিডনির ক্ষতিঃ হাইপারথার্মিয়া কিডনির ক্ষতি করতে এবং অ্যাকুট রিনাল ফেইলিউর ডেকে আনতে পারে।
- মাসপেশীসমূহের ক্ষতিঃ হাইপারথার্মিয়া শরীরের মাসপেশীসমূহকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং রাবডোমায়োলাইসিস নামক অবস্থা তৈরি করতে পারে যা হাঁটুর রক্তনালী বন্ধ করে দেয়।
- অন্যান্য সমস্যাঃ হাইপারথার্মিয়ার অন্যান্য সমস্যা হল রক্তনালীর বিকৃতি, রক্তাল্পতা, ব্লাড ক্লটিং সমস্যা, দুর্বলতা এবং বমি বমি ভাব ইত্যাদি।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অতিরিক্ত গরম অনেক দ্রুত এবং ক্রমাগত মোকাবেলা না করলে এটি একটি জীবনঘাতী অবস্থায় পরিণত হতে পারে। তাই গরমের প্রথম লক্ষণ দেখা মাত্রই তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। নতুবা মারাত্মক ফলাফল ঘটতে পারে। আর গরমকালীন সময় প্রচুর পানি পান করা, লঘু কাপড় পরিধান করা এবং নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
মেয়েদের শরীর গরম থাকে কেন
মেয়েদের শরীর গরম থাকার বিষয়টি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যার কারণগুলি নিম্নরূপ:
- মাসিক স্রাব চক্র: প্রতি মাসে মহিলাদের মাসিক স্রাব চক্রের সময় তাদের শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে। এই সময় তাদের শরীরে এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনগুলি বেজ বডি টেম্পারেচার বৃদ্ধি করে থাকে। ফলে রজঃস্রাবের আগে এবং পরে কিছুদিন শরীর গরম থাকার অনুভূতি হয়।
- অভ্যন্তরীণ হরমোনের ক্রিয়া: এছাড়াও মহিলাদের শরীরে থাইরয়েড ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ হরমোনগুলির ক্রিয়াকলাপ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এগুলির কোন অনিয়মিততা শরীরে গরম থাকার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
- বয়ঃসন্ধিকালীন পর্যায়: প্রায় ৪৫-৫৫ বছর বয়সের মহিলারা বয়ঃসন্ধিকালীন পর্যায়ে প্রবেশ করেন। এ সময় মহিলাদের দেহে হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে যার ফলে হটফ্ল্যাশ অর্থাৎ শরীরের উপরিভাগ অস্থায়ীভাবে গরম হওয়ার অনুভূতি হয়।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার সময় গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন এবং বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তারা গরম অনুভব করতে পারেন। এছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বেবির ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরে তাপ নির্গমনের ওপর চাপ পড়ে যা শরীরকে গরম করে তোলে।
- রক্তস্রাবজনিত সমস্যা: কিছু মহিলার মাসিক স্রাব চক্রে ভারী রক্তক্ষরণ হয়। এতে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে গরম থাকার অনুভূতি হতে পারে।
- হরমোন সমস্যা: মহিলাদের শরীরে হরমোনাল অসামঞ্জস্য যেমন থাইরয়েড রোগ, পলিসিস্টিক ওভারী সিনড্রোম ইত্যাদিও শরীরকে গরম করে তুলতে পারে।
- স্বাস্থ্যসম্মত আচরণ: ব্যায়াম না করা, অপরিপক্ক খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া এবং অতিরিক্ত চা-কফি গ্রহণ করার কারণেও মহিলাদের শরীর গরম থাকতে পারে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রধানত হরমোনাল ও শারীরিক পরিবর্তনের কারণেই মেয়েদের শরীরে গরম থাকার অনুভূতি হয়। তবে এগুলো প্রায়শই সাধারণ ও স্বাভাবিক। যদিও কখনও কখনও এগুলো কোন রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকা এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করা উচিত।
শরীর গরম হলে কি খাওয়া উচিত
শরীর গরম হলে খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কারণ শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। এতে পেট ব্যথা, অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই শরীর গরম থাকার সময় নিম্নোক্ত খাবারগুলি গ্রহণ করা উচিতঃ
- জঙ্গল মুরগির সুপ: জঙ্গল মুরগির সুপ খাওয়া যেতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে তরল থাকায় এটি দেহকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
- বাদামভাত: বাদাম তাপ প্রশমনকারী উপাদান। বাদামভাত স্বাস্থ্যকর এবং পরিপাকযোগ্য। এটি গরম অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে।
- ঘি দিয়ে তৈরি খাবার: ঘি খাওয়ার পরে দেহতাপ বৃদ্ধি পায় না। তাই জ্বরের সময় ঘি দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন। যেমন- পরোটা, দুধভাত ইত্যাদি।
- চিকেন সুপ: চিকেন সুপ খুব নরম খাবার। এটি মাংসের থেকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং ভালো পরিপাকযোগ্য।
- দই: দই দেহকে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রোবায়োটিক্স সমৃদ্ধ। এছাড়াও দই পেট ব্যথা দূর করে।
- ডাল ও তরকারি: ডাল, শাক-সবজি খেতে পারেন। তবে মশলাগুলো পরিমিত রাখুন। খুব বেশি মশলা নয়।
- চা-কফি এড়িয়ে চলুন: জ্বরের সময় চা-কফি পান করা উচিত নয়। কারণ এগুলো ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে দেয়।
- পানি/নারকেলের পানি: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, নারকেলের পানি পান করতে হবে। এগুলো তাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এছাড়াও খাবারের পরিমাণ বেশি রাখা যাবে না। খাবারকে পরিপাকযোগ্য রাখতে হবে। খাবার খাওয়ার পর বিশ্রাম নিতে হবে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসা যাবে। শরীর গরম থাকার সময় সতর্ক খাদ্য গ্রহণ জরুরি।
শরীর গরম হলে ঠান্ডা করার উপায়
শরীর গরম হলে তা ঠান্ডা করার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যায়। যখন শরীরের তাপমাত্রা বেশি বেড়ে যায়, তখন সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই জরুরি। নিয়ে আলোচনা করা হলো কিভাবে শরীর গরম হলে তা ঠান্ডা করা যাবে:
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন: শরীর গরম হলে শরীর থেকে অনেক পানি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, নারকেলের পানি, দুধ, রস ইত্যাদি পান করতে হবে। এতে শরীর ডিহাইড্রেটেড হওয়া থেকে বাঁচবে এবং তাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
- ঠান্ডা স্নান করুন: ঠান্ডা জলে স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসতে সাহায্য করবে। আপনি ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে পারেন অথবা শাওয়ারে ঠান্ডা জলে দাঁড়াতে পারেন। এতে দেহের তাপ শোষণ করে নেওয়া যাবে।
- এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান চালু রাখুন: শরীর গরম থাকলে ঘরে এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান চালু রেখে ঠান্ডা রাখুন। এতে শরীর ঠান্ডা অনুভব করবে।
- ঠান্ডা পানি পান করুন: প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা পানি বা বরফ জল খান। এতে দেহ ভেতর থেকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
- ঠান্ডা পাটাতন বা আইস প্যাক ব্যবহার করুন: আপনি ঘাড়, মাথা বা অন্য শরীরাঙ্গে ঠান্ডা পাটাতন বা আইসপ্যাক রাখতে পারেন। এতে শরীরের তাপ শোষণ করে নেওয়া হবে।
- পাতলা কাপড় পরুন: গরমের সময় অবশ্যই লঘু ও পাতলা কাপড় পরতে হবে। এতে দেহ থেকে ঘামাতে সহজ হবে এবং শরীর ঠান্ডা থাকবে।
- ছায়ায় থাকুন: পরাবাস্তব রোদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বদা ছায়ায় থাকতে হবে। রোদে না গেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে।
- ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন: ভারী খাবার গ্রহণ করলে শরীরে খাবার পরিপাক প্রক্রিয়ার সময় তাপ বেশি উৎপন্ন হয়। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- বিশ্রাম নিন: শরীর গরম থাকলে যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে। শরীর গরম থাকার সময় যেকোন শারীরিক পরিশ্রম না করাই ভাল।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি সবকিছু করেও তাপমাত্রা কমে না আসে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এটি কোন গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে।
সুতরাং শরীর গরম থাকলে পর্যাপ্ত পানি পান করা, ঠান্ডা ব্যবস্থা নেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি খুবই জরুরি। যদি তারপরও তাপমাত্রা কমে না আসে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে গুরুতর পরিণতি হতে পারে।
শরীরের গরম কমানোর উপায়
শরীর গরম হলে তা ঠান্ডা করার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যায়। যখন শরীরের তাপমাত্রা বেশি বেড়ে যায়, তখন সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই জরুরি। নিয়ে আলোচনা করা হলো কিভাবে শরীর গরম হলে তা ঠান্ডা করা যাবে:
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন: শরীর গরম হলে শরীর থেকে অনেক পানি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, নারকেলের পানি, দুধ, রস ইত্যাদি পান করতে হবে। এতে শরীর ডিহাইড্রেটেড হওয়া থেকে বাঁচবে এবং তাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
- ঠান্ডা স্নান করুন: ঠান্ডা জলে স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসতে সাহায্য করবে। আপনি ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে পারেন অথবা শাওয়ারে ঠান্ডা জলে দাঁড়াতে পারেন। এতে দেহের তাপ শোষণ করে নেওয়া যাবে।
- এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান চালু রাখুন: শরীর গরম থাকলে ঘরে এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান চালু রেখে ঠান্ডা রাখুন। এতে শরীর ঠান্ডা অনুভব করবে।
- ঠান্ডা পানি পান করুন: প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা পানি বা বরফ জল খান। এতে দেহ ভেতর থেকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
- ঠান্ডা পাটাতন বা আইস প্যাক ব্যবহার করুন: আপনি ঘাড়, মাথা বা অন্য শরীরাঙ্গে ঠান্ডা পাটাতন বা আইসপ্যাক রাখতে পারেন। এতে শরীরের তাপ শোষণ করে নেওয়া হবে।
- পাতলা কাপড় পরুন: গরমের সময় অবশ্যই লঘু ও পাতলা কাপড় পরতে হবে। এতে দেহ থেকে ঘামাতে সহজ হবে এবং শরীর ঠান্ডা থাকবে।
- ছায়ায় থাকুন: পরাবাস্তব রোদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বদা ছায়ায় থাকতে হবে। রোদে না গেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে।
- ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন: ভারী খাবার গ্রহণ করলে শরীরে খাবার পরিপাক প্রক্রিয়ার সময় তাপ বেশি উৎপন্ন হয়। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- বিশ্রাম নিন: শরীর গরম থাকলে যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে। শরীর গরম থাকার সময় যেকোন শারীরিক পরিশ্রম না করাই ভাল।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি সবকিছু করেও তাপমাত্রা কমে না আসে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এটি কোন গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে।
সুতরাং শরীর গরম থাকলে পর্যাপ্ত পানি পান করা, ঠান্ডা ব্যবস্থা নেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি খুবই জরুরি। যদি তারপরও তাপমাত্রা কমে না আসে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে গুরুতর পরিণতি হতে পারে।
অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায়
অতিরিক্ত গরম বা হাইপারথার্মিয়া একটি জীবনঘাতী অবস্থা। শরীরের নিয়মিত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপ অতিরিক্ত গরম বলে বোঝায়। যখন শরীরের তাপমাত্রা 104°F (40°C) এর বেশি হয়, তখন তা হাইপারথার্মিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়। অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যায়:
- পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করুন: শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল দ্রব্য দ্রুত নষ্ট হয়ে গেলে শরীরের উষ্ণতা বেড়ে যায়। তাই অবশ্যই দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি, নারকেলের পানি এবং অন্যান্য তরল পান করতে হবে। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে।
- দেহের তাপমাত্রা দ্রুত কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। ঠান্ডা পানিতে ডুবে থাকা বা ঠান্ডা শাওয়ার করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিও এড়িয়ে চলা উচিত।
- এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান চালু রাখুন: গরমকালে এবং হাইপারথার্মিয়ার সময় ঘরে এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান চালু রাখা উচিত। এটি ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেহকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। তবে যদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে বাতাস চলাচলের জন্য জানালা-দরজা খুলে রাখতে হবে।
- ঠান্ডা টাওয়েল বা আইস প্যাক ব্যবহার করুন: শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন- গলা, মাথা, বুক ইত্যাদিতে ঠান্ডা টাওয়েল বা আইসপ্যাক রাখলে শরীরের তাপ শোষণ করে নেওয়া হবে। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।
- ঠান্ডা জলপান করুন: প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা জল বা বরফের পানি পান করুন। এর মাধ্যমে দেহের ভেতর থেকে তাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে খুব বেশি ঠান্ডা জল এড়িয়ে চলুন।
- পাতলা কাপড় পরিধান করুন: গরম থাকলে সর্বদা পাতলা এবং হালকা রঙের কাপড় পরতে হবে। এতে শরীর থেকে বাষ্পায়িত হওয়া সহজ হবে এবং তাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
- ছায়ায় অবস্থান করুন: প্রচন্ড রোদ এড়িয়ে চলতে হবে এবং ছায়ায় থাকতে হবে। রোদে থাকলে শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
- বিশ্রাম নিন: গরম এড়াতে শারীরিক কাজ বা পরিশ্রম কমিয়ে দিতে হবে। বিশ্রাম নেওয়া হাইপারথার্মিয়া প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
- ঘনঘন তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন: ঘনঘন তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখুন যাতে তা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি সব পদ্ধতি অবলম্বন করারও পর তাপমাত্রা কমে না আসে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হাইপারথার্মিয়া কোন গুরুতর অসুখের লক্ষণও হতে পারে।
হাইপারথার্মিয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং মারাত্মক হতে পারে। তাই এটি প্রতিরোধের জন্য উপরোক্ত পন্থাগুলি অনুসরণ করতে হবে। ছোটখাটো উপসর্গ দেখামাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, নতুবা এর জটিল পরিণতি ঘটতে পারে।
অতিরিক্ত গরম প্রশ্ন এবং উত্তর FAQ
প্রশ্নঃ অতিরিক্ত গরমে শরীরে কি কি সমস্যা হয় ?
উত্তরঃ আবার প্রস্তাবিত বিষয়টি সারাংশিত করা হলো:
- পারদা ব্যবহার করা
- ফ্যান ব্যবহার করা
- কুলার ব্যবহার করা
- পানি ব্যবহার করা
- আলোর অনুপ্রবেশ রোধ
- উচ্চ তাপমাত্রার অনুমোদন করা না
- গরমীয় সামগ্রী ব্যবহার করা
প্রশ্নঃ গ্রীষ্মে অতিরিক্ত গরম এড়ানোর উপায়?
উত্তরঃ গ্রীষ্মে অতিরিক্ত গরম এড়ানোর উপায়ঃ
- বেশি পানি পান করা
- অন্যের সাথে যোগাযোগ করা
- স্বস্তি অনুভব করা
- ঠাণ্ডা জালের নিচে বসা
- শাক-সবজি যোগাযোগ করা
প্রশ্নঃতাপ তরঙ্গের কারণ?
উত্তরঃ তাপ তরঙ্গের কারণঃ
- সূর্যের আলো বা তাপমাত্রা পরিবর্তন
- অবজ্ঞাত প্রাণি বা বাস্তব বস্তুর কার্যকারিতা
- অবস্থানের উচ্চতা বা সম্পর্কিত পরিবেশের কার্যকারিতা
- পর্যাপ্ত তাপমাত্রা ও আলো প্রাপ্তি
- ভৌত বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার প্রভাব
- ভৌতিক দক্ষতা বা রাসায়নিক গঠনের উপস্থিতি
প্রচন্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার উপায়
প্রচণ্ড গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখা খুবই জরুরি। অত্যধিক গরম শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এবং মারাত্মকও হতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতিতে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন: গরমের সময় দেহ থেকে অনেক পানি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এই পানির ঘাটতি পূরণ করতে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি, নারকেলের পানি, দুধ, রস ইত্যাদি পান করতে হবে। এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে এবং শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। পানি পান না করলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হবে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।
- ঠান্ডা স্নান করুন: প্রচণ্ড গরমে ঠান্ডা পানিতে স্নান করা খুবই উপকারী। ঠান্ডা পানিতে গোসল বা শাওয়ার করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসবে। ঠান্ডা পানি শরীর থেকে তাপ শোষণ করে নেবে এবং শরীরের উপরের তাপ কমিয়ে দেবে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানির প্রয়োজন হবে না।
- এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান চালু রাখুন: গরমকালে বা প্রচণ্ড গরমের সময় ঘরে এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান চালু রাখা উচিত। এতে ঘরের বাতাস ঠান্ডা থাকবে এবং দেহকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে। যদি বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার না থাকে, তাহলে অন্তত ঘরের জানালা খোলা রাখতে হবে বাতাস চলাচলের জন্য।
- ঠান্ডা জল স্প্রে করুন: ঘরের বাইরে থাকতে হলে মাঝে মাঝে ঠান্ডা জল স্প্রে করুন। এটি শরীরকে স্থায়ীভাবে ঠান্ডা রাখবে না তবে কিছুক্ষণের জন্য তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে। এছাড়াও মাথা, গলা, বুক এবং বাহুর উপর ঠান্ডা জল ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
- ঠান্ডা টাওয়েল বা আইসপ্যাক ব্যবহার করুন: শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন মাথা, গলা, বুক ইত্যাদি জায়গায় ঠান্ডা পানিসিক্ত টাওয়েল বা আইসপ্যাক রাখুন। এটি শরীর থেকে তাপ শোষণ করে নেবে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে।
- ঠান্ডা জলের বাথটাবে বসুন: এটি হচ্ছে প্রচণ্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার একটি কার্যকর উপায়। শরীরের প্রায় সব অংশে ঠান্ডা জল লাগবে এবং তাপমাত্রা কমবে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা জলের প্রয়োজন নেই।
- ঠান্ডা জল পান করুন: ঘন ঘন ঠান্ডা পানি বা বরফের পানি পান করুন। এটি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
- পাতলা এবং হালকা রঙের কাপড় পরুন: প্রচণ্ড গরমে ভারী বা গাঢ় রঙের কাপড় পরিধান করা উচিত নয়। বরং পাতলা এবং হালকা রঙের কাপড়ই পরতে হবে। এতে শরীর থেকে ঘাম বাষ্পায়িত হতে পারবে এবং শরীর ঠান্ডা থাকবে।
- ছায়ায় থাকুন: প্রচণ্ড গরমে প্রতিটি সময় রোদে থাকা উচিত নয়। রোদের প্রচণ্ড তাপ শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবে। তাই সর্বদা ছায়ায় অবস্থান করতে হবে। বাড়ি বা অফিসে গেলে বাইরে না বের হওয়াই ভাল।
- যথেষ্ট বিশ্রাম নিন: অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম গরমকালে এড়িয়ে চলা উচিত। শরীরকে গরম করে তুলে এবং ঘামাতে বাধ্য করে। তাই যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।
- শীতল খাবার গ্রহণ করুন: গরমের সময় শীতল ও তরল খাবার খাওয়া উচিত। যেমন - ফলমূল রস, শর্বত, ফালুদা, কলা, আম ইত্যাদি। এগুলো শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তবে বরফগোলা বা আইসক্রিম বেশি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এগুলো অগ্রাহ্য উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
- চা-কফি এড়িয়ে চলুন: চা বা কফি গরমের সময় এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো শরীরকে আরও গরম করে তুলতে পারে এবং ডিহাইড্রেটেডও করতে পারে।
- ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় সতর্ক থাকুন: গরম সময়ে অত্যাবশ্যক না হলে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়। যদি বাইরে যেতে হয়, তাহলে সকালের বেলা বা সন্ধ্যার সময়টা বেছে নিন। দুপুরের রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
প্রচণ্ড গরম একটি জীবনঘাতী পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তাই গরমকালে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের উপর যত্ন নেওয়া এবং সচেতন থাকলে প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। গরমের প্রথম লক্ষণই নজরে আসলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
কি খেলে শরীর ঠান্ডা হবে
খাবার | কারণ |
---|---|
তরমুজ | তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকায় এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে। |
ডালিম | ডালিমের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ঠান্ডা গুণাবলী রয়েছে যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। |
মিন্ট | মিন্টের মেন্থল রয়েছে যা একটি প্রাকৃতিক কুলিং এজেন্ট। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। |
কঁচা পেঁয়াজ | কঁচা পেঁয়াজে থাকা অ্যালিসিন রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। |
লাউ | লাউতে থাকা ক্যাপসাইসিন শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে। |
ধনেপাতা | ধনেপাতার কুলিং এফেক্ট থাকায় এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। |
দই | দই ভাল মাত্রায় ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকায় এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। |
তরমুজরস | তরমুজরসে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকায় এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের তাপমাত্রা কমায়। |
কলা | কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। |
আদা | আদার জিঞ্জেরল রয়েছে যা শরীরের উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করে। |
আমলকী | আমলকীর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। |
নারিকেল পানি | নারিকেল পানিতে থাকা ই্লেক্ট্রোলাইট শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে এবং তাপমাত্রা কমায়। |
কমলালেবু | কমলালেবুর অ্যাসকরবিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। |
টমেটো | টমেটোতে থাকা লাইকোপিন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। |
কাঁচা আঁচপাতা | কাঁচা আঁচপাতায় থাকা অক্সালেট শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। |
এছাড়াও বেশি পরিমাণে পানি পান করা, কম তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা এবং বেশি পরিমাণে শাক-সবজি খাওয়া শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
লেখক এর মন্তব্য ঃ অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায় - কি খেলে শরীর ঠান্ডা হবে
অবশেষে বলা যায়, গরমকালীন সময়ে উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে শরীর ঠান্ডা রাখা এবং অতিরিক্ত উত্তাপ থেকে বাঁচা সম্ভব। এই সহজ কিন্তু কার্যকর পথগুলি অবলম্বন করলে আপনি গরমের কষ্টকর প্রভাব থেকে দূরে থাকতে পারবেন। শরীরের স্বাস্থ্য এবং সচলতা বজায় রাখতে এই পন্থাগুলি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আশা করি আপনি অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায় সম্বন্ধে সমস্ত জ্ঞান অর্জন করেছেন।
প্রিয় পাঠকবর্গ, আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের কাছে কার্যকরী ও উপকারী মনে হয়েছে। যদি প্রকৃতপক্ষেই এর মাধ্যমে আপনারা কিছু নতুন জানতে সক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন। তাদের সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ভাগ করে নিন, যাতে তারাও এর সুফল পান।
আমরা সকলেই একটি সুস্থ, সমৃদ্ধশালী ও সুখী জীবনযাপনের অধিকারী। সেই লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আপনাদের পরামর্শ ও মন্তব্যগুলোও আমাদের কাছে অমূল্য সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে। তাই নিয়মিতভাবে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে আমাদের উৎসাহিত করুন।
সবাইকে আন্তরিক শুভকামনা রইল। সুস্থ, সমৃদ্ধ ও সুখী জীবন কামনা করছি
বিডি গর্জিয়াস নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url