শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম - লক্ষণ ও ঔষধের নাম জেনে নিন

কৃমি একটি খুব সাধারণ এবং জটিল সমস্যা যা শিশুদের বেশিরভাগকে আক্রান্ত করে। যৌন্দারব্যবস্থা ও গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল ট্রাক্টে এই কৃমিগুলি থাকতে পারে এবং ভীষণভাবে শিশুদের ক্ষতিগ্রস্থ করে। 

লক্ষণ ও ঔষধের নাম জেনে নিন
এই জটিল সমস্যাটি নিরামনয়ের জন্য চিকিৎসকরা প্রায়ই কৃমির ওষুধ নির্দেশ করেন। তবে শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণ, পরীক্ষা এবং ওষুধের নাম সম্পর্কে সচেতনতা থাকলে এই সমস্যা দূর করা সহজ হবে। আসুন জেনে নিই শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম এবং লক্ষণ ও ওষুধের নাম।

পেজ সূচিপত্রঃ শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম - লক্ষণ ও ঔষধের নাম জেনে নিন

শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

কৃমি একটি খুবই সাধারণ সমস্যা যা প্রায় প্রতিটি শিশুকেই আক্রান্ত করে। কৃমি শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। তাই শিশুদের নিয়মিত কৃমির ঔষধ খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।

বয়স অনুযায়ী ঔষধের পরিমাণ নির্ধারণ করুন
প্রতিটি বয়সের শিশুর জন্য কৃমির ঔষধের পরিমাণ আলাদা। তাই শিশুর বয়স অনুযায়ী ঔষধের পরিমাণ নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই পরিমাণ ঔষধ সব বয়সের শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়।

ঔষধের নির্দেশনা ভালভাবে পড়ুন
কৃমির ঔষধের প্যাকেজে খাওয়ানোর নির্দেশনা থাকে। এই নির্দেশনাগুলো ভালভাবে পড়ে বুঝে নিন। কখন, কীভাবে এবং কতবার ঔষধ খাওয়াতে হবে সেগুলো জেনে নিন।

ঔষধ খাওয়ানোর সঠিক সময় মেনে চলুন
কৃমির ঔষধগুলো প্রায়শই রাতে বা খালি পেটে খাওয়ানোর নির্দেশনা থাকে। তাই এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঔষধের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য সঠিক সময় মেনে চলা জরুরি।

শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল পান করান
কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পরে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল পান করাতে হবে। এতে করে ঔষধটি সহজেই পরিপাক হবে এবং কৃমিগুলোকে মারতে সাহায্য করবে।

ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য রাখুন
কিছু শিশু কৃমির ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। যেমন- বমি বা ডায়রিয়া। তাই ঔষধ খাওয়ানোর পর শিশুর লক্ষণ গুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। যদি কোন গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তাহলে তৎক্ষণাত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ঔষধের কোর্স সম্পূর্ণ করুন
কৃমি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করতে ঔষধের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা খুব জরুরী। ঔষধের সব ডোজ পুরো না খেলে কৃমিগুলো আবারও ফিরে আসতে পারে।

কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর সময় এই নিয়মগুলো মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে শিশুটি সম্পূর্ণভাবে কৃমিমুক্ত হবে এবং তার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অ্যালবেনডাজল (Albendazole): প্রতি তিন মাস পরপর পরিবারের সবাই একটি করে অ্যালবেনডাজল বড়ি সেবন করতে পারেন1।
মেবেনডাজল (Mebendazole): মেবেনডাজল হলে খেতে হবে পরপর তিন দিন। সাত দিন পর আরেকটা ডোজ খাওয়া যায়2।
শিশুদের ক্ষেত্রে একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে।
দুই বছরের নিচে কোনো শিশুকে খাওয়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন2।
এছাড়াও, শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার সময় নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত:

শিশুদের খাওয়ার আগে ও শৌচাগার ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে কীভাবে ভালো করে হাত কচলে ধুতে হয়, তা শেখানো।
বাইরের খোলা অপরিচ্ছন্ন খাবার না খাওয়া।
মাঠঘাটে শিশুদের খালি পায়ে খেলতে না দেওয়া।
পানি ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধ করে পান করা।
শাকসবজি ও মাংস খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া।
এই নিয়মগুলি মেনে চললে শিশুদের কৃমির সংক্রমণ এবং তার জন্য হওয়া স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে, যেকোনো ঔষধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

কৃমির লক্ষণ

কৃমির লক্ষণ সনাক্ত করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃমির আক্রমণের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্নিহিত থাকতে পারে চোখের আঘাত, ত্বকের চামড়ার সমস্যা, পেটে ব্যথা, ও শরীরের অস্বস্তি। প্রথমেই, চিকিৎসক প্রথম কৃমির লক্ষণ সনাক্ত করার জন্য রোগীর রোগের ইতিহাস নিরীক্ষণ করেন। 

এরপর, সাধারণত রোগীর রক্ত বা পেট পরীক্ষা করা হয় যাতে কোনও জীবাণুর উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়। কৃমির লক্ষণ সনাক্ত করার সাথে সাথে চিকিৎসক চিকিৎসার প্রস্তাবনা করেন। এটি সাধারণত একাধিক ঔষধ বা বিশেষ কৃমি নাশক এবং পরিমাণমতো পুনঃ পরীক্ষা এবং চিকিৎসা যেমন ব্যবহার করা।

তবে, মনে রাখতে হবে যে, কৃমির আক্রমণ সাধারণত একটি গম্ভীর সমস্যা যা সঠিকভাবে পরিচিত এবং চিকিৎসা করা জরুরি। তাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।

কৃমিবিজ্ঞানের অভিজ্ঞ প্রকাশ্যে কৃমি একধরনের জীবাণু বা জীবাণুগুলি যা মানবের দেহে বাস করে অব্যাহতির কারণে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগের লক্ষণ সনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে উপযুক্ত চিকিত্সা ও প্রতিকার নেওয়া যায়। নিচে কৃমির লক্ষণ সনাক্ত করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

পাচা ও গলা ব্যাথা: কৃমির আক্রমণে সাধারণত প্রথম লক্ষণ হলেও পাচা ও গলায় ব্যাথা অনুভব করা। এই লক্ষণ সাধারণত প্রথম দিনে অনুভব করা হয়।

পাচার সমস্যা: কৃমির আক্রমণে পাচার সমস্যা হলে লক্ষণ হলো পেটে গ্যাসের সমস্যা, পেটে ব্যাথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি।

উপসর্গের প্রকাশ: কৃমি আক্রমণে উপসর্গের প্রকাশ হলে লক্ষণ হলো জ্বর, শরীরে শক্তি হারানো, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি ইত্যাদি।

ওজন হারানো: কৃমির আক্রমণে অনেক সময় লোকেরা ওজন হারায় বা অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।

মস্তিষ্কের কাজের সমস্যা: কৃমি আক্রমণে মস্তিষ্কের কাজের সমস্যা হলে লক্ষণ হলো মানসিক অবস্থা পরিবর্তন, ভুল বা অস্বস্তিত বোধ, নিদ্রাঘাত ইত্যাদি।

প্রকোপের লক্ষণ: কৃমি আক্রমণে অনেক সময় প্রকোপের লক্ষণ হয়ে উঠে যেমন ব্রেকআউট, চর্মের সমস্যা, ল্যার্ম এবং স্কেল্পের সমস্যা ইত্যাদি।

মস্তিষ্কের দ্বিধা: কৃমি আক্রমণে মস্তিষ্কের দ্বিধা অনুভব করা হয় যেমন হতাশা, চিন্তা, প্রচেষ্টা সফলতা প্রাপ্ত না হওয়া ইত্যাদি।

প্রজনন সমস্যা: কৃমি আক্রমণে প্রজনন সমস্যা হলে মহিলারা গর্ভধারণে সমস্যা অনুভব করতে পারেন।

চক্ষুর সমস্যা: কৃমি আক্রমণে চক্ষুর সমস্যা হলে লক্ষণ হলো চোখের জ্বালা, ব্যারিশ ইত্যাদি।

শ্বাসকষ্ট: কৃমি আক্রমণে শ্বাসকষ্ট হলে লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট, শ্বাসে শ্বাসে অনুভব করা যেমন ছিঁড়াপটি।

এইভাবে, কৃমির আক্রমণের লক্ষণ সনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক চিকিত্সা নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও উল্বণ লক্ষণে চিকিত্সার সাথে সাথে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

কৃমির ঔষধের নাম সিরাপ

কৃমির আক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সিরাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ রূপান্তর করে থাকে। এটি মূলত শিশুদের জন্য প্রস্তুত করা হয়ে থাকে, যাদের অনেক সময় বিভিন্ন কৃমির আক্রমণে সহায়ক হয়ে থাকে। এই সিরাপ গড়ে উঠে হিমেন্তল, একটি অন্যত্রাত্মক কৃমি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী। এটি প্রধানত প্যারাসাইট ইলিমিনেশনে ব্যবহৃত হয়, 

যা শিশুদের সমস্যাগুলি দূর করে তাদের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। এই সিরাপের অসাধারণ গুণগুলির মধ্যে একটি হল এটির রসায়নিক বিশেষতা, যা কৃমির উত্সাহিত করে এবং তাদের বিস্তার করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এটি আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

কৃমির অসু ভালো করার জন্য নিম্নলিখিত সিরাপগুলি সাধারণত ব্যবহৃত হয়:

  • অলবেন্ডাজোল (Albendazole)
  • মেবেনডাজোল (Mebendazole)
  • প্রাজিকোয়েন্টেল (Praziquantel)
  • আইভারমেকটিন (Ivermectin)
  • লেভামিসোল (Levamisole)

উল্লেখ্য, এই সিরাপগুলি বা ওষুধগুলি সেবন করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ প্রতিটি ওষুধের নির্দিষ্ট ডোজ এবং সেবন পদ্ধতি থাকে, যা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। তাই নিরাপদে ওষুধ সেবনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি।

গুড়া কৃমির ওষুধের নাম

বাংলাদেশে ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য কৃমির নিম্নলিখিত ওষুধগুলি খুব জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত হয়:

  • ভার্মেক্স (Vermox) - এটি আলবেনডাজোল রসায়নের একটি জনপ্রিয় ওষুধ।
  • জেনটেল (Zentel) - এটি আলবেনডাজোল রসায়নের অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।  
  • কিউর্ম প্লাস (Kurem Plus) - এটি মেবেনডাজোল রসায়নের একটি জনপ্রিয় ওষুধ।
  • নেমোক্যুর (Nemocure) - এটি আলবেনডাজোলের একটি প্রচলিত ব্র্যান্ড।
  • ওর্মিকু'র (Wormicure) - এটি মেবেনডাজোল রসায়নের একটি জনপ্রিয় ওষুধ।
  • বান্ডক্যার (Bandcure) - এটি পাইরানটেল পামোয়েটের একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।
  • পাইরাজাইড (Pyrazide) - এটি পাইরানটেল পামোয়েটের আরও একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। 
  • নেমাজল (Nemazol) - এটি আলবেনডাজোল রসায়নের একটি ব্র্যান্ড।
  • হেলিক্যার (Helicure) - এটি মেবেনডাজোল রসায়নের একটি ওষুধ।
  • কিউরভার্ম (Kurworm) - এটিও মেবেনডাজোল রসায়নের একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।

এছাড়াও বাজারে আরও কিছু ব্র্যান্ডের কৃমির ওষুধ পাওয়া যায়। তবে উপরের ওষুধগুলি ছেলে ও মেয়ে শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এবং চিকিৎসকদের দ্বারাও বেশি পরামর্শ দেওয়া হয়।

কৃমির ট্যাবলেট কি চুষে খেতে হয়

কৃমির সমস্যা প্রায় প্রতিটি শিশুকেই আক্রান্ত করে। এই সমস্যা মোকাবেলায় চিকিৎসকরা প্রায়শই কৃমির ট্যাবলেট বা সিরাপ নির্দেশ করেন। তবে অনেকেই জানেন না কৃমির ট্যাবলেটগুলো কীভাবে সঠিকভাবে খেতে হবে। অনেকে ভাবেন কৃমির ট্যাবলেট চুষে খাওয়া উচিত। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কৃমির ট্যাবলেট কি চুষে খেতে হয় না কি।

কৃমির ট্যাবলেট চুষে খাওয়া উচিত নয়। কারণ এগুলো ত্বকের মাধ্যমে দেহে শোষিত হতে পারে না। তাই শুধুমাত্র মুখের ঝিল্লি এবং অন্ত্রনালীর মাধ্যমেই এগুলো কার্যকর হতে পারে। ট্যাবলেটের গায়ে একটি প্রোটেকটিভ কোটিং থাকে, যা এটিকে অম্ল থেকে রক্ষা করে। এই কোটিং ট্যাবলেটকে অদ্রাব্য এবং অপরিণত করে রাখে।

শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

যখন আপনি ট্যাবলেটটি চুষতে থাকেন, তখন এই কোটিং দূর হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, ঔষধের রসায়নগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং আপনি প্রত্যাশিত রিলিফ পান না। এছাড়াও, একবার কোটিং দূর হলে, রসায়নগুলি মুখের ঝিল্লি এবং গলার ক্ষতসাধন করতে পারে। তাই কৃমির ট্যাবলেট চুষে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।

বরং, কৃমির ট্যাবলেট পুরোপুরি গিলে ফেলা উচিত, একটু পানি বা জুস পান করার সাথে সাথে। এটি নিশ্চিত করবে যে ট্যাবলেটটি পরিপূর্ণভাবে অদ্রাব্য অবস্থায় থাকে এবং শরীরের মধ্যে প্রবেশ করার পর, সঠিকভাবে বিয়োজিত হয়। পানি বা জুস পান করা ট্যাবলেটটিকে পেটের পথে নামতে সাহায্য করবে।

কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে, চিকিৎসকরা ট্যাবলেটটি ভাঙার অনুমতি দিতে পারেন। যদি শিশুটি খুব ছোট হয় এবং ট্যাবলেটটি গিলতে অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে, ট্যাবলেটটি গুঁড়ো করে খিচুড়ি বা অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। তবে এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ীই করা উচিত।

কৃমির ট্যাবলেট চুষে খাওয়া একদম উপযুক্ত নয়। এটি ঔষধের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং মুখ ও গলায় ক্ষত করতে পারে। পরিবর্তে, ট্যাবলেটটি পুরোপুরি গিলে ফেলা এবং পানি বা জুস পান করা উচিত। এটি নিশ্চিত করবে যে ঔষধটি সর্বোচ্চ কার্যকারিতা দেখাবে এবং শিশুটি কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শই সর্বোত্তম।

কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয়

কৃমি একটি খুবই সাধারণ সমস্যা যা শিশু থেকে শুরু করে বড়দের অনেককেই আক্রান্ত করে। এই সমস্যা মোকাবেলায় চিকিৎসকরা নিয়মিত কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। তবে অনেকেই জানেন না কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় কিনা। আসুন এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে নেওয়া যাক।

কৃমির ঔষধগুলি প্রায়শই অ্যালবেনডাজোল, মেবেনডাজোল এবং পাইরানটেল প্যামোয়েট রসায়নের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এই রসায়নগুলি শরীরের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলির সঙ্গে কোনও প্রকার বিরোধ করে না। তাই কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর ভিটামিন খাওয়ার কোনও বিশেষ প্রয়োজন নেই।

তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন খাওয়া প্রয়োজন হতে পারে। যেমন:

যদি শিশুটি কৃমির কারণে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে: কৃমির আক্রমণ শিশুর শরীরের পুষ্টির অভাব সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার এবং ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট পরামর্শ দিতে পারেন।

যদি শিশুর রক্তহীনতা রয়েছে: কৃমির কারণে অনেক শিশুই রক্তহীনতায় আক্রান্ত হয়। এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসক লৌহ ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট পরামর্শ দিতে পারেন।

যদি শিশুটি অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধ খেয়ে থাকে: কিছু কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসকরা অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধ খেলে শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করতে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট পরামর্শ দিতে পারেন।

সাধারণভাবে, কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কোনও বিশেষ ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে উপরের যে কোনও অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন খাওয়া উচিত। শুধুমাত্র কৃমির ঔষধ খাওয়ার কারণেই ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

আরো কিছু কৃমির ওষুধ খাওয়ার পরে যেসব ভিটামিন খাওয়া লাগতে পারে নিম্নে উল্লেখ করা হলো

ভিটামিন এ: ভিটামিন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, যা দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ বাড়ায় এবং চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর মৌখিক রূপে ভিটামিন এ পূরণ করা যেতে পারে, যেমন কার্রট, আলু, মূলা, পালংক, পালংগ, কলার লীফ সবজি ইত্যাদি।

ভিটামিন সি: ভিটামিন সি দেহের প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর ভিটামিন সি যোগ করতে পারেন মৌখিক রূপে বা ভিটামিন সি যুক্ত খাবার মাধ্যমে, যেমন লেমন, কমলা, মিষ্টি কোলা, আম, গোলাপজল ইত্যাদি।

ভিটামিন ডি: কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর ভিটামিন ডি পূরণের জন্য সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি প্রাপ্তি সম্ভব। অতএব, প্রতিদিন প্রায় ১৫-৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে গিয়ে যান।

ভিটামিন বি-১২: কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর ভিটামিন বি-১২ খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে। ভিটামিন বি-১২ সূত্র হিসেবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও যথাক্রমে সোয়ামন্য খাবারে পাওয়া যায়।

এছাড়াও কৃমির ঔষধ খাওয়ার সময় কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। যেমন:

  • ওষুধের নির্দেশনা অনুসরণ করা
  • খালিপেটে বা রাতে ওষুধ খাওয়া (যদি নির্দেশনা থাকে)
  • ওষুধ খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
  • ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য রাখা
  • ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করা
সারাংশে বলা যায়, কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর সাধারণত কোনও বিশেষ ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন খেতে হতে পারে। শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শই সর্বোত্তম। পরিশেষে বলা যায়, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলাই কৃমির সমস্যা মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় কাজ।

পিরিয়ডের সময় কৃমির ঔষধ খাওয়া যায়

কৃমি একটি খুবই সাধারণ সমস্যা যা প্রায় প্রতিটি মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে। তবে এই সমস্যার সমাধানে চিকিৎসকরা প্রায়শই কৃমির ঔষধ নির্দেশ করেন। কিন্তু অনেকে এই প্রশ্ন করেন যে, পিরিয়ডের সময় কি কৃমির ঔষধ খাওয়া যায়? আসুন এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে দেখা যাক।
পিরিয়ডের সময় কৃমির ঔষধ খাওয়া যায়
সাধারণভাবে পিরিয়ডের সময় কৃমির ঔষধ খাওয়া যায়। কৃমির ঔষধগুলি প্রায়শই অ্যালবেনডাজোল, মেবেনডাজোল এবং পাইরানটেল প্যামোয়েট রসায়নের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এই রসায়নগুলি মহিলাদের মাসিক চক্রের সাথে কোনও প্রকার বিরোধ করে না। তাই পিরিয়ডের সময় এই ঔষধগুলি নিরাপদে খাওয়া যায়।

তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন:

রক্তক্ষরণ বা অতিরিক্ত রক্তপাত: কিছু মহিলার পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা রক্তপাত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কৃমির কিছু ঔষধ রক্তপাত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মাথাব্যথা বা যন্ত্রণা: কিছু মহিলার পিরিয়ডের সময় মাথাব্যথা বা যন্ত্রণা হয়। কিছু কৃমির ঔষধ এই সমস্যাগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় কৃমির ঔষধ খাওয়া সুরক্ষিত নয়। তাই যদি কোনও মহিলা গর্ভবতী হন এবং পিরিয়ডের সময় কৃমির সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এছাড়াও পিরিয়ডের সময় কৃমির ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। যেমন:
  • ঔষধের নির্দেশনা মেনে চলা
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
  • ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য রাখা
  • ঔষধের পুরো কোর্স শেষ করা
সারাংশে বলা যায়, সাধারণভাবে পিরিয়ডের সময় কৃমির ঔষধ খাওয়া নিরাপদ। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। শিশু বা বড়দের জন্যই হোক না কেন, কৃমির সমস্যা মোকাবেলায় চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা এবং সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিশেষে বলা যায়, শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়াই সবচেয়ে বড় কাজ।

কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে না পরে খেতে হয় 

কৃমি একটি খুবই সাধারণ সমস্যা যা শিশু থেকে শুরু করে বড়দের অনেককেই আক্রান্ত করে। এই সমস্যা মোকাবেলায় চিকিৎসকরা প্রায়শই কৃমির ট্যাবলেট বা সিরাপ নির্দেশ করেন। তবে অনেকেই জানেন না কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে না পরে খাওয়া উচিত। আসুন এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে নেওয়া যাক।

সাধারণভাবে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে কিছু খেতে হবে না। বরং খালি পেটে ট্যাবলেটটি খাওয়াই উত্তম। কারণ কৃমির ওষুধের রসায়নগুলি শরীরের মধ্যে দ্রুত শোষিত হওয়ার জন্য খালি পেট প্রয়োজন।

যদি কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে খাবার খাওয়া হয়, তাহলে পরিপাক প্রক্রিয়ার সময় রসায়নটি অংশত বা পুরোপুরিভাবে অপরিণত হয়ে যেতে পারে। ফলস্বরূপ, ওষুধটি পর্যাপ্ত কার্যকরী হবে না এবং কৃমিগুলো সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হবে না।

তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে খাবার খেতে হতে পারে। যেমন:

যদি শিশুটি খুব ছোট হয়: খুব ছোট শিশুদের জন্য খালিপেটে ট্যাবলেট খাওয়া কষ্টকর হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসক পরামর্শ দিতে পারেন ট্যাবলেটটি খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানোর জন্য।

যদি ট্যাবলেটের নির্দেশনায় তা বলা থাকে: কিছু কৃমির ট্যাবলেটের প্যাকেজে খাবারের সাথে খেতে বলা থাকতে পারে। এমন ক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত।

যদি ট্যাবলেটটি অ্যামোক্সিসিলিনের সাথে খেতে হয়: অ্যামোক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। তাই যদি কৃমির ট্যাবলেটটি এই ওষুধের সাথে খেতে হয়, তখন খাবারের পরে খাওয়াই ভালো।

সারাংশে বলা যায়, কৃমির ট্যাবলেট সাধারণভাবে খালিপেটে খাওয়াই উত্তম। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে খাবারের সাথে খাওয়া যেতে পারে। শেষপর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শই সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। শিশু বা বড়দের জন্যই হোক না কেন, কৃমির সমস্যা মোকাবেলায় সঠিক নিয়ম মেনে চলা এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ শরীরের জন্য এটাই প্রয়োজন।

উপসংহারঃ শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম - লক্ষণ ও ঔষধের নাম জেনে নিন

কৃমি একটি খুব জটিল এবং সাধারণ সমস্যা হিসেবে শিশুদের জীবনযাত্রাকে অনেকাংশে বিপর্যস্ত করে। যখন এই সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয়, তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে ওষুধ নির্দেশ করা উচিত। শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমেই কৃমির সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতা, ভাল স্বাস্থ্যবিধি এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের কৃমি থেকে দূরে রাখা সম্ভব। শেষ পর্যন্ত শিশুদের সুস্থ থাকা এবং প্রাণান্ত বিকাশ নিশ্চিত করাই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি গর্জিয়াস নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url