বাচ্চাদের আমাশয় রোগ একটি সাধারণ সমস্যা যা খুব সহজেই উপেক্ষিত হয়ে যেতে পারে। তবে এটি পরিণতি বয়সে আরও বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই আজকে আমরা জানবো বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত ও বাচ্চাদের আমাশয় হয় কেন। এবং বাচ্চার আমাশয় হলে করণীয় আপনার কি কি করনীয় থেকে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আমাশয় রোগের সঠিক চিকিৎসা না করলে শিশুদের পুষ্টি গ্রহণ এবং বৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই আর্টিকেলটি বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত ও বাচ্চাদের আমাশয় হয় কেন নিয়ে আলোচনা করবে। খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে বাচ্চাদের আমাশয় রোগের উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
পেজ সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত - বাচ্চাদের আমাশয় হয় কেন
- বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত
- বাচ্চাদের আমাশয় হয় কেন
- বাচ্চাদের আমাশয়ের লক্ষণ
- বাচ্চার আমাশয় হলে করণীয় কি
- বাচ্চাদের আমাশয় ঔষধ নাম
- বাচ্চাদের আমাশয় সিরাপ
- বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত নয়
- বাচ্চাদের আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
- লেখক এর মন্তব্যঃ বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত - বাচ্চাদের আমাশয় হয় কেন
বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত
শিশুদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য ঠিক খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে
শিশুদের মাঝে আমাশয় খুবই একটা সাধারণ সমস্যা। আমাশয়ের সময় শিশুর খাদ্যাভ্যাস
সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই সময় ঠিক খাবার চয়ন করা খুব জরুরী। নইলে
সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই আজকে আমরা বাচ্চাদের আমাশয়ের সময় কি
খাওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করব।
আমাশয়ের সময় বাচ্চাদের জন্য পচনশীল খাবার খুবই ক্ষতিকর। কারণ এই ধরনের খাবার
আমাশয়ের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই আমাশয়ের সময় বাচ্চাদের সবসময় লাল
আলু, ভাত, সুজি এবং পচা খাবারের পরিবর্তে পানি, ঝোল খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার
গ্রহণ করা উচিত।
পানি: আমাশয়ের সময় বাচ্চাদের প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পানি দেহে তরল
সঞ্চালন বজায় রাখবে এবং শরীরের বিভিন্ন টক্সিন বের করে দেবে। তবে গরম পানি না
খেয়ে ঠাণ্ডা পানি পান করা উচিত।
ঝোল খাবার: বাচ্চাদের জন্য ঝোল খাবার খুবই উপকারী। যেমন ভাত ভাত, সুজির ঝোল,
ডালের ঝোল ইত্যাদি। এগুলি শরীরে তরল সঞ্চালন বজায় রাখবে এবং নিজেদের দেহে তৈরী
হওয়া টক্সিনগুলো বের করে দেবে।
বেনানা: বেনানা হজম করতে সহজ এবং ফাইবারসমৃদ্ধ। এছাড়াও এটি পটাসিয়াম ও ভিটামিন
বি-৬ সমৃদ্ধ। যা শিশুদের শরীরকে আমাশয়ের বিরুপ প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।
দই: দই খাওয়া শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। দইয়ের প্রোবায়োটিক্স বাচ্চাদের পরিপাক
তন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে এবং আমাশয়ের সমস্যা প্রশমিত করবে।
সবুজ শাক: সবুজ শাকলতি খাওয়ার ফলে শিশুদের দেহে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যোগ হবে।
এটি আমাশয়ের বায়ুজনিত সমস্যাগুলো দূর করবে এবং পরিপাক তন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায়
রাখবে।
অন্যদিকে আমাশয়ের সময় চিনি, তেল এবং খাবারে নুন বেশি থাকা পরিহার করা উচিত।
এগুলি শিশুদের আমাশায়কে আরও খারাপ করবে। এছাড়া খাবারে মসলা, গরম মশলা এবং
খাবারে পনির ব্যবহার বাদ দেওয়া উচিত।
আমাশয়ের সময় শিশুদের খাদ্যাভ্যাস নজরদারি করে সঠিক খাবার প্রদান করা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। যদি খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে উপকারী খাবার গ্রহণ করা
হয়, তাহলে আমাশয়ের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শিশুদের সুস্থ ও প্রাণবন্ত
রাখতে সঠিক খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন।
বাচ্চাদের আমাশয় হয় কেন
বাচ্চাদের আমাশয় হওয়ার কারণসমূহ
আমাশয় বা গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস হচ্ছে একটি খুবই সাধারণ সমস্যা যা শিশুদের মাঝে
প্রায়শই দেখা যায়। এটি একটি আক্রান্ত অবস্থা যেখানে পরিপাক তন্ত্রের আভ্যন্তরীণ
প্রদাহ ঘটে। শিশুদের ক্ষেত্রে আমাশয় হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। আসুন
আমরা এই কারণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করি।
ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: আমাশয়ের প্রধান কারণ হলো ভাইরাস বা
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। রোটাভাইরাস, নরওভাইরাস, অ্যাডেনোভাইরাস এবং স্ট্রেপটোকোকাস
বা ই.কোলাই সংক্রমণের প্রধান কারণ। এই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াগুলি খাদ্য, পানি বা
অন্য কোনো মাধ্যম থেকে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে তাদের পরিপাক তন্ত্রকে আক্রান্ত
করে।
খাদ্য দূষণ: অপরিষ্কার খাদ্য বা মন্দ গুণমানের খাবার গ্রহণ করলে শিশুদের
আমাশয় হতে পারে। যেমন অধিক পরিমাণে স্পাইস, চিনি বা তেল থাকা খাবার, অপরিপক্ক
মাংস বা অন্যান্য দূষিত খাবার।
লেক্টোজ অসহনীয়তা: কিছু শিশুর লেক্টোজ অসহনীয়তা থাকে, যার কারণে দুধ বা
দুগ্ধজাতদ্রব্য গ্রহণ করলে আমাশয় হতে পারে।
খাদ্য অ্যালার্জি: শিশুদের কিছু খাদ্য প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে যা
আমাশয়ের কারণ হতে পারে। ডিম, মাছ, দুধ, গম প্রভৃতি খাবারের প্রতি অ্যালার্জি হতে
পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করার পর
আমাশয় হতে পারে। এটি পরিপাক তন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট
করে।
শারীরিক চাপ: শারীরিক চাপ বা দুর্ঘটনার কারণে পরিপাক তন্ত্রে আঘাত লাগলে
আমাশয় হতে পারে।
অতিরিক্ত ফ্রুট জুস পান: অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্রুট জুস পান করলে শিশুদের আমাশয় হতে
পারে।
অন্যান্য কারণ: প্রচণ্ড খিদে, অস্ত্রোপচার, হর্মোনাল বা মেটাবোলিক সমস্যা
অথবা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও শিশুদের আমাশয় হতে পারে।
শিশুদের আমাশয় প্রতিরোধ করতে হলে সর্বোপরি খাদ্যের পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করানো এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব
দিতে হবে। শিশুদেরকে লেক্টোজ অসহনীয়তা এবং খাদ্য অ্যালার্জি আছে কিনা তা
নিরীক্ষণ করতে হবে। যেকোনো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে
পরীক্ষা করাতে হবে। আমাশয়ের প্রাথমিক লক্ষণগুলো যেমন বমি বমি ভাব, পেটব্যথা,
জ্বর দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
বাচ্চাদের আমাশয়ের লক্ষণ
বাচ্চাদের আমাশয়: লক্ষণ ও প্রতিকার
আমাশয় একটি খুবই সাধারণ অসুখ যা বাচ্চাদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যায়। এটি হজম
তন্ত্রের একটি সমস্যা যা হাল্কা থেকে গুরুতর রূপ ধারণ করতে পারে। বাচ্চাদের
আমাশয়ের লক্ষণগুলি সচরাচর হলো - পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, কঁাথা বা অতিরিক্ত
গ্যাস, কঠিন পায়খানা এবং রুচিহীনতা বা অন্যান্য খাদ্যগ্রহণ
সমস্যা।
আমাশয়ের প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে - অতিরিক্ত বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য
গ্রহণ, খাবারের প্রতি অ্যালার্জি, রোগবাহিত জীবাণু বা ভাইরাসের সংক্রমণ,
অন্যান্য রোগ যেমন গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফলাক্স, এবং মানসিক চাপ। তবে
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রায়শই অপরিপক্ক হজমশক্তি এবং নতুন খাবারগুলির প্রতি
শরীরের অভ্যস্ততার অভাবই সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাচ্চাদের আমাশয়ের উপসর্গগুলি লক্ষ্য করে সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাচ্চা বারবার বমি করে বা গুরুতর পেটব্যথা অনুভব করে তাহলে
তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অনেক সময় ঘরোয়া উপায়েই
আমাশয়ের হালকা লক্ষণগুলি দূর করা সম্ভব।
বাচ্চাদের আমাশয় দূর করতে বাবা-মায়েরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। প্রথমত,
তাদের খাবারের খুব সাবধানে লক্ষ্য রাখা উচিত এবং শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখে ধীরে
ধীরে নতুন খাবার পরিবেশন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল পান করা
জরুরী যাতে শরীরের তরল শক্তির ঘাটতি না হয়। এছাড়াও, বিশ্রামের প্রয়োজন
অনুসারে বাচ্চাকে বিশ্রাম নিতে দিতে হবে।
আমাশয়ের লক্ষণগুলি যদি একদম গুরুতর না হয় তাহলে বাবা-মা কিছু সাধারণ হোমিও
চিকিৎসা অবলম্বন করতে পারেন যেমন - কমলা বা ঘি মিশ্রিত সাদা চা খাওয়ানো, সবুজ
বা কমলা চায়ের বাগান পান করানো, ভাজা কলা খাওয়ানো এবং ভাল মানের
প্রোবায়োটিকস সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করানো। তবে একই লক্ষণগুলি দীর্ঘস্থায়ী হলে
অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সর্বোপরি, বাচ্চাদের আমাশয় দূর করতে স্বাস্থ্যকর আহারাভ্যাস গড়ে তোলা এবং
যথাযথ বিশ্রাম নেওয়া অপরিহার্য। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন
এবং গাঢ় মনোযোগের মাধ্যমে বাচ্চাদের আমাশয়ের উপসর্গগুলি বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ
করা সম্ভব।
বাচ্চার আমাশয় হলে করণীয় কি
বাচ্চাদের মধ্যে আমাশয়ের সমস্যা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। খাদ্য অসহনশীলতা,
খারাপ খাদ্যাভ্যাস, ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ প্রভৃতি নানা কারণে আমাশয়
দেখা দিতে পারে। যখন শিশুর আমাশয় হয়, তখন বাবা-মায়ের সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে।
শিশুর আমাশয়ের লক্ষণগুলি সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করা উচিত। বাচ্চার আমাশয় হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
আমাশয়ের লক্ষণগুলি হলো - পেট ব্যথা, বমি-বমি ভাব, বমি করা, কনষ্টিপেশন,
অতিরিক্ত গ্যাসের উৎপাদন এবং খিদের অভাব। যদি এই লক্ষণগুলি তীব্র হয় বা শিশুর
রক্তাক্ত বমি বা পায়খানা হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে
হবে।
শিশুর পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে যাতে শরীরের তরল শক্তির ঘাটতি না
হয়। আমাশয়ের সময় শিশুর বারবার বমি হওয়া বা ডায়েরিয়া হওয়ায় তরল শক্তি
দ্রুত নষ্ট হতে পারে। এই অবস্থায় শিশুকে প্রচুর পরিমাণে মাতৃদুগ্ধ, ওরাল
রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) বা অন্যান্য বিশুদ্ধ তরল পান করাতে হবে।
আমাশয়ের সময় শিশুর খাদ্য নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো
কিছুদিন পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র সহজপাচ্য ও মৃদু খাবার খাওয়াতে হবে যেমন -
টস্ট, সুপ, দই, কমলা ইত্যাদি। আমাশয়ের লক্ষণ কমে এলে ধীরে ধীরে অন্যান্য
সাধারণ খাবার আবার শুরু করা যাবে।
যে কারণে শিশুর আমাশয় হয়েছে সেটি নির্ণয় করে সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
যদি কোন খাদ্য বিশেষের প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রমাণিত হয়, তবে তা এড়িয়ে চলতে
হবে। অথবা যদি কোন ভাইরাস বা অন্যান্য রোগ জীবাণু কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়,
তাহলে সেগুলির সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিশুর পরিপাক ক্রিয়ার সহায়তায় প্রয়োজনীয় হলে চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন
প্রোবায়োটিক বা এনজাইম সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সাথে কিছু
হোমিওপ্যাথিক ঔষধও সহায়তা করতে পারে। তবে ঔষধ ব্যবহারে সর্বদা চিকিৎসকের মতামত
গ্রহণ করতে হবে।
শিশুর যথেষ্ট বিশ্রাম এবং আরামই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাশয়ের সময় শিশুর
অতিরিক্ত নড়াচড়া করানো ঠিক নয়। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিতে দিলে আমাশয়
দ্রুত সেরে উঠতে পারবে।
একক থেকে শিশুর আমাশয়ের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘরোয়া সতর্কতা
অবলম্বন করলেই অনেক সময় গুরুতর অবস্থা এড়ানো সম্ভব। তবে যে কোনো সময় চিকিৎসক
পরামর্শ সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের সতর্কতা ও সঠিক পদক্ষেপ
গ্রহণেরই উপর শিশুর দ্রুত সুস্থতা নির্ভর করে।
বাচ্চাদের আমাশয় ঔষধ নাম
বাচ্চাদের আমাশয় একটি খুবই সাধারণ ও জটিল সমস্যা। এটি হজম তন্ত্রের একটি
বিকার যা নানাভাবে প্রকাশ পেতে পারে। বাচ্চাদের আমাশয়ের মূল লক্ষণগুলি হল -
পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা, কঁাথা বা গ্যাস, ডায়েরিয়া ইত্যাদি। এই
সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন ধরনের ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
-
গ্যাস রিলিভার ওষুধসমূহ: আমাশয়জনিত অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা
সমাধানে ডাইমেথাইকোন ও সিমেথিকোন নামক দুটি ওষুধ খুব কার্যকর। এগুলি
গ্যাসের বাবলগুলিকে বড় করে একত্রিত করে যাতে তা বের হয়ে আসতে
পারে।
-
অ্যানালজেসিক ওষুধসমূহ: বাচ্চাদের আমাশয়জনিত পেটব্যথা দূর করতে
প্যারাসেটামল এবং আইবুপ্রোফেন নামক অ্যানালজেসিক ওষুধগুলি ব্যবহৃত হয়।
তবে এগুলির অধিক ডোজ বা দীর্ঘদিন ব্যবহার উচিত নয়।
-
অ্যান্টি-ডায়ারিয়াল ওষুধ: আমাশয়জনিত ডায়েরিয়া সমস্যায়
লোপেরামাইড নামক অ্যান্টি-মোটিলিটি ওষুধটি কার্যকর। তবে এটি আর্সেনিক
মহাদায়েরিয়ায় কাজ করে না।
-
অ্যান্টি-নাসিয়া ওষুধ: বাচ্চাদের আমাশয়ের একটি বড় সমস্যা হল -
বমি বমি ভাব বা বমি করা। এই সমস্যা দূর করতে ডমপেরিডন নামক
অ্যান্টি-নাসিয়া ওষুধ বিশেষভাবে কার্যকর।
-
প্রোবায়োটিকস: বেশ কিছু গবেষণা থেকে দেখা গেছে বিভিন্ন
প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট আমাশয়ের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে। এগুলি
বাচ্চার হজমশক্তি বাড়াতে ও আমাশয়ের উপসর্গগুলি হ্রাস করতে সহায়ক
ভূমিকা পালন করে।
-
হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ: বাচ্চাদের আমাশয়ের জন্য হোমিওপ্যাথিক
নক্সভোমিকা, আর্সেনিকাম অ্যালভাম, কালক্যারিয়া কার্ব প্রভৃতি কিছু ঔষধ
বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এগুলি আমাশয়ের নানাবিধ লক্ষণ যেমন বমি
বমি ভাব, অতিরিক্ত গ্যাস, ডায়েরিয়া সহ অন্যান্য লক্ষণ নিরসনে সাহায্য
করে।
-
ওরাল রিহাইড্রেশন সল্যুশন (ORS): আমাশয়জনিত ডায়েরিয়া বা
অতিরিক্ত বমির কারণে বাচ্চার শরীরের প্রচুর পরিমাণ তরল ক্ষতি হয়। এই
ক্ষতিপূরণে ORS পান করানো বেশ কার্যকর। সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্যান্য
পানীয় যেমন চা, স্যুপ, জুস ইত্যাদি খাওয়ানো উচিত।
বাচ্চার আমাশয়ের সমস্যা সামলাতে শুধু ঔষধই নয়, আহারের পরিবর্তন এবং বিশ্রাম
নেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে আমাশয়ের সময় কিছুদিন শুধু BRAT আহার
(বেনানা, রাইস, অ্যাপেল জুস ও টোস্ট) গ্রহণ করানো উচিত। পরে ধীরে ধীরে
অন্যান্য খাবার যুক্ত করা যেতে পারে। সাথে যথেষ্ট বিশ্রাম, ঘুম এবং আরাম
প্রয়োজন।
বাচ্চাদের আমাশয় সিরাপ
বাচ্চাদের আমাশয় সিরাপঃ নামসমূহ ও কার্যকারিতা
বাচ্চাদের আমাশয় একটি খুবই সাধারণ সমস্যা যা হজম তন্ত্রের বিকার হিসেবে
প্রকাশ পায়। এর মূল লক্ষণগুলি হল - পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা, কঁাথা
বা অতিরিক্ত গ্যাস, ডায়েরিয়া এবং রুচিহীনতা। শিশুদের এই সমস্যা সমাধানে
বিভিন্ন ধরনের সিরাপ ব্যবহার করা হয়।
গ্যাস সিরাপসমূহঃ বাচ্চাদের অতিরিক্ত গ্যাস সমস্যায় সিমেথিকোন এবং
ডাইমেথাইকোন ওষুধ বিশেষ বিশেষ কার্যকর। এগুলি গ্যাসের ক্ষুদ্র বুদবুদগুলিকে
একত্রিত করে বড় করে তোলে যাতে তা সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে
উপলব্ধ ইনফ্যান্ট্স গ্যাস ড্রপস, গ্যাস রিলিফ ড্রপস প্রভৃতি সিরাপসমূহের
প্রধান উপাদান হিসেবে এই দুটি ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ডমপেরিডন সিরাপঃ বাচ্চাদের বমি বমি ভাব বা বমি করার একটি
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষেধক হল ডমপেরিডন নামক ওষুধ। এটি ইনসুলিন-লাইক গ্রোথ
ফ্যাক্টর-১ এর ওপর কাজ করে বমি বমি ভাব দূর করে। ডমপেরিডন হাই স্ট্রেংথ
সিরাপ বিভিন্ন পেশাদারী প্রস্তুতকারকদের কাছে পাওয়া যায়।
অন্টাসিড সিরাপঃ বাচ্চাদের আমাশয় থেকে উদ্ভূত গ্যাস্ট্রিক উপসর্গ
যেমন হার্টবার্ন, এসিডিটি ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে অন্টাসিড সিরাপসমূহ
কার্যকর। এগুলিতে আলুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা ম্যাগনেসিয়াম
হাইড্রোক্সাইড থাকে যা অন্ত্রগত অম্লতা দূর করে গ্যাসট্রিক উপশম ঘটায়। এই
শ্রেণীর সিরাপের কিছু নামঃ গেভিসকন, ডাইজেনে, জেলগ্যাস ইত্যাদি।
প্রোকিনেটিক সিরাপঃ একই সঙ্গে পেটব্যথা, বমি ভাব এবং গ্যাসের সমস্যা
থাকলে প্রোকিনেটিক সিরাপসমূহ কার্যকর। এগুলি হজম তন্ত্রের নড়াচড়া
বাড়িয়ে দিয়ে অনাবশ্যক গ্যাস বা অপরিপাক খাদ্য দ্রুত বের হয়ে যেতে
সহায়তা করে। ডমরিড, অগ্নি প্লাস, ডাইজেরেল প্রভৃতি প্রোকিনেটিক সিরাপে
মূলত ডমপেরিডন, মোসাপ্রাইড, পল্ডিন মেথাইলব্রোমাইড ইত্যাদি ওষুধ
থাকে।
প্যারাসেটামোল সিরাপঃ আমাশয়জনিত পেটব্যথা দূর করার জন্য
প্যারাসেটামল নামক অ্যানালজেসিক ওষুধ এক কার্যকর উপায়। এটি আমাশয়ের
প্রদাহজনিত ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। বাচ্চাদের নির্দিষ্ট ডোজ অনুসারে
পারাসেটামল সিরাপ খাওয়ানো হয়।
লোপেরামাইড সিরাপঃ আমাশয়জনিত ডায়েরিয়ার সময় লোপেরামাইড নামক
অ্যান্টি-মোটিলিটি ওষুধটি কার্যকর। এটি এন্টেরিক নার্ভ সিস্টেম প্রভাবিত
করে অন্ত্রের অতিরিক্ত নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে আনে। তবে অন্ত্রের সংক্রমণ
বা তীব্র ডায়েরিয়ার সময় এটি নিরাপদ নয়। গ্রুনিল, নোরিট, লোপ্রামোল
প্রভৃতি লোপেরামাইড সিরাপসমূহ বাজারে পাওয়া যায়।
প্রোবায়োটিক সিরাপঃ বহু গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন প্রোবায়োটিক
সাপ্লিমেন্ট আমাশয়ের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে। এগুলি শরীরের
বেনিফিশিয়াল ব্যাকটেরিয়াদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং
আমাশয়ের উপসর্গগুলি প্রশমিত করে। বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন প্রোবায়োটিক
সিরাপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ল্যাক্টোবেবি, জেডোরিল, প্রোটেক্টিস
ইত্যাদি। এগুলি আমাশয়জনিত নানা সমস্যা যেমন গ্যাস, বমি বমি ভাব,
পেটব্যথা, ডায়েরিয়া প্রভৃতি প্রশমিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
হোমিও সিরাপসমূহঃ বাচ্চাদের আমাশয়ের হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সায়
বিভিন্ন হোমিও সিরাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখযোগ্য কিছু
সিরাপের নাম হল - আর্সেনিকাম অ্যালভাম 30, নাক্স ভমিকা 30, দোসিডিয়াম
পাইক্রাইনিকাম 30, পোডোফিলিন 30 প্রভৃতি। বিভিন্ন প্রকারের আমাশয়ের
উপসর্গগুলি যথা বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত গ্যাস, কঠিন পায়খানা, মল অতিসার
ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এগুলি কার্যকর।
যৌগিক সিরাপসমূহঃ বিভিন্ন সংকর ঔষধ উপাদান মিশ্রিত কিছু যৌগিক
সিরাপও বাচ্চাদের আমাশয়ের জন্য বাজারে পাওয়া যায়। এদের প্রধান
উপাদানগুলির মধ্যে থাকতে পারে - ডাইমেথাইকোন, পেপারমিন্ট অয়েল, জিঞ্জার,
সেন্না লিফ, অ্যালোভেরা, প্যারাসেটামোল ইত্যাদি। দস্ত প্রমেথ্যাজিন,
ড্রপিলার, এরিস্টোন প্রভৃতি যৌগিক সিরাপ আমাশয়ের বহুমুখী লক্ষণগুলি যেমন
পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, গ্যাস, ডায়েরিয়া ইত্যাদি প্রশমিত করতে
কার্যকর।
বাচ্চাদের আমাশয়ের জন্য উপরোক্ত বিভিন্ন সিরাপসমূহ নির্দিষ্ট কোন
লক্ষণের জন্য কার্যকর তা চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে হবে এবং
নির্দেশনা মতো ব্যবহার করতে হবে। সিরাপ পান করানোর পাশাপাশি সঠিক খাদ্য ও
বিশ্রামও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব কিছুর সমন্বয় থাকলেই বাচ্চাদের
আমাশয় দ্রুত সেরে উঠবে।
বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত নয়
বাচ্চাদের আমাশয়ের সময়: কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন। বাচ্চাদের আমাশয়
একটি খুবই সাধারণ সমস্যা যা হজম তন্ত্রের বিকার হিসেবে প্রকাশ পায়।
পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করা, এবং ডায়েরিয়ার মতো আমাশয়ের লক্ষণগুলি
খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে থাকে। সুতরাং আমাশয়ের সময় বাচ্চাদের কিছু
নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।
-
প্রচলিত মত অনুযায়ী, আমাশয়ের সময় বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হল
BRAT আহার - অর্থাৎ বেনানা, তরকারি, দই এবং টোস্ট। এগুলি শরীরের হজম
প্রক্রিয়ার উপর চাপ কম বৃদ্ধি করে এবং পুষ্টিগত উপাদান যোগায়।
অন্যদিকে, অনেক খাবারই হজমের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, যেগুলি
এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
-
ফাস্ট ফুড বা জাংক ফুডঃ বর্গার, পিৎজা, চিপস এবং অন্যান্য ফাস্ট ফুড
আমাশয়কে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে কারণ এগুলি খুব বেশি তেল, লবণ এবং
শক্তিশালী মশলা দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও এগুলি পূর্ণ পেটের
অনুভূতি না দিয়ে বেশি পরিমাণে খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
-
চিকেন নগেটস বা চিকেন পপকর্নঃ এগুলোও ডিপ ফ্রায়েড এবং লবনাক্ত খাবার
বাচ্চার হজমশক্তির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
-
মিষ্টি জাতীয় খাবারঃ কেক, বিস্কুট, চকলেট এবং অন্যান্য মিষ্টি
দ্রব্যাদি বাচ্চাদের জন্য তেমন স্বাস্থ্যকর নয়। এগুলি হজমকে বিঘ্নিত
করে এবং গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
-
তাজা ফল ও শাকসবজি ছাড়াঃ জাভা বা প্যাম্পকিন অনেক সময় আমাশয়ের
সমস্যা বাড়াতে পারে। শস্য ও মটরশুটি যেমন মটর, সয়াবিন এবং কলিজা
দ্রব্যাদিও এই সময় এড়িয়ে চলা উচিত।
-
গরম ও মশলাযুক্ত খাবারঃ গরম মশলা যেমন লঙ্কা, রসুন, পেঁয়াজ,
দারুচিনি প্রভৃতি আমাশয়ের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পনির এবং
ক্রিমযুক্ত খাবারও হজম করতে অসুবিধা হতে পারে।
-
কফি, চা এবং অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ঃ এগুলি বাচ্চাদের হজম
তন্ত্রকে বিঘ্নিত করে এবং ডিহাইড্রেশনও ঘটাতে পারে। এছাড়াও গেজিয়া
পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।
সুতরাং আমাশয়ের সময় বাচ্চাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে নজর দিতেসাবধানতা
অবলম্বন করতে হবে। বিশ্রামও প্রয়োজন। এই সতর্কতা এবং চিকিত্সকের পরামর্শ
মেনে চললে বাচ্চার আমাশয় শীঘ্রই সেরে উঠবে।
বাচ্চাদের আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
আমাশয় রোগ বা গ্যাস্ট্রোঈনটেস্টাইনাল অসুস্থতা শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ
সমস্যা। এই অসুখটি শিশুদের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং পরিপাকতন্ত্রকে
প্রভাবিত করে। আমাশয় রোগের কারণে বাচ্চাদের বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে
হয় যেমন- পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, গ্যাস, কনস্টিপেশন, ডায়েরিয়া ইত্যাদি।
এই সমস্যাগুলি যদি প্রকৃত হয়ে ওঠে তাহলে বাচ্চার স্বাস্থ্যগত অবস্থা খারাপ
হয়ে যেতে পারে। তাই এই সমস্যাগুলির প্রতিকার করা জরুরি। ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি
অবলম্বন করে এই সমস্যাগুলির প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়। নিচে আমাশয় রোগের
ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
পদ্ধতি। শিশুদের সাধারণত রুটিন, দুধ ও ফল খাওয়ানো উচিত। এছাড়া তেলাপোকা,
মশলাযুক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। খাদ্যে পরিমিত লবণ এবং
সিঁদুর ব্যবহার করতে হবে। শিশুর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার ফলে আমাশয়
সম্পর্কিত সমস্যাগুলি প্রশমিত হবে।
প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা
শিশুদের প্রচুর পরিমাণে তরল পান করাতে হবে। এতে শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে
তরল থাকবে এবং পরিপাকতন্ত্রের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে। পানীয় হিসাবে
পরিষ্কার জল, অ্যালোভেরা জুস, কমলালেবু পানি এবং অন্যান্য নিরামিষ ঝোল পান
করানো যেতে পারে।
পরিপাক বৃদ্ধিকারী ওষুধ গ্রহণ
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় পরিপাক বৃদ্ধিকারী ওষুধগুলি কার্যকর ভূমিকা
পালন করতে পারে। এই ওষুধগুলো শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আঁশটে বা চা
বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়ে প্রস্তুতকৃত আঁশটে বা চা আমাশয় রোগের চিকিৎসায়
কার্যকর। এদের মধ্যে ঐরন্ড চা, অদিনা চা, মিরিচা চা, এলাচ গুড়ো চা ইত্যাদি
উল্লেখযোগ্য। এগুলো শিশুর আমাশয়ের অসুখ সারাতে সাহায্য করে।
পেট মালিশ করা
শিশুর পেটের উপর ধীরে ধীরে মালিশ করলে তা পরিপাক প্রক্রিয়া সহজ করতে সাহায্য
করে। মালিশের সময় ঘুরপাক দিকে হাত বুলিয়ে যেতে হবে যাতে গ্যাস বের হওয়া
সহজ হয়। শিশুর খাওয়ার পরপরই এই মালিশ করা যেতে পারে।
শারীরিক ব্যায়াম
প্রতিদিন কিছুটা শারীরিক ব্যায়াম শিশুর পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
করবে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের কোলে নেওয়া, হাটানো ইত্যাদিই ব্যায়াম
হিসেবে গণ্য করা হয়। বড় শিশুদের বাইরে খেলা করাও ভালো উপায়।
আরাম করা
আমাশয় রোগ থাকলে শিশুকে যথেষ্ট আরাম নিতে দিতে হবে। অতিরিক্ত শারীরিক চাপ বা
পরিশ্রম তাকে আরও অসুস্থ করে তুলতে পারে। তাই শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে
দিতে হবে।
যোগব্যায়াম
যোগাসন শিশুদের পরিপাক প্রক্রিয়া সুষম রাখতে সাহায্য করে। শ্বাসপ্রশ্বাস
নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে শক্তি বৃদ্ধি করে যোগাসন। শিশুদের
ক্ষেত্রে সহজ যোগাসন যেমন- ভূমিস্পর্শাসন, নৌকাসন, ধনুরাসন ইত্যাদি করানো
যেতে পারে।
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার
কিছু প্রাকৃতিক উপাদান শিশুদের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এর
মধ্যে রয়েছে জিরা বাটি, অদিনা বাটি, শুঁটকি বাটি, মিশ্রিত বাটি ইত্যাদি।
এগুলো তাদের খাদ্যে মিশিয়ে দেওয়া যায়।
গরম জলের ব্যবহার
গরম জলের থেরাপি আমাশয়ের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য গরম জলের
থার্মল ব্যাগ শিশুর পেটের উপর রাখা যায়। অথবা একটি গরম কাপড়ে জড়িয়ে শিশুর
পেটের উপর প্রলেপ দেওয়া যেতে পারে।
হলুদের গুঁড়ো
হলুদ শিশুদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এটি আমাশয় ও অন্ত্রের প্রদাহ
কমায়। দুধ বা জলের সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
ঘি
ঘি শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য এবং আমাশয়ের সমস্যা দূর করে। খাবারে একটু ঘি
মিশিয়ে বা চুমুক দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঘি খাওয়া ঠিক নয়।
নারকেলের পানি
নারকেলের পানি সহজপাচ্য এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটি শরীরের পানি শোষণ ক্ষমতা
বাড়িয়ে দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমিয়ে আনে। তাই শিশুদের নারকেলের পানি
খাওয়ানো উপকারী।
মেথি জুস
মেথি জুস শিশুদের আমাশয় রোগের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি পরিপাকশক্তি
বৃদ্ধি করে এবং পেট ব্যথা কমায়। শিশুদের দিনে অন্তত একবার মেথি জুস খাওয়ানো
যেতে পারে।
গাজর রস
গাজর রস আমাশয়িক উপসর্গ প্রশমিত করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন, খনিজ ও
এনজাইমগুলো পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। শিশুদের খাবারের সাথে গাজর রস মিশিয়ে
দেওয়া যায়।
কিসমিস জুস
কিসমিস জুস ভিটামিন সি ও আয়রন সমৃদ্ধ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ব্যথা কমাতে
সাহায্য করে। শিশুদের দিনে একবার এই জুস খাওয়ানো যেতে পারে।
এলোপ্যাথিক চর্বি দ্রাবক ওষুধ
এলোপ্যাথিক চর্বিদ্রাবক ওষুধ সাবধানে খাওয়ালে আমাশয় রোগের উপসর্গ প্রশমিত
হতে পারে। তবে চিকিত্সকের পরামর্শক্রমে এসব ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
শাক-সবজি মাংস এড়ানো
পরিপাকে অসুবিধা হলে কিছুদিনের জন্য শাক-সবজি, মাছ-মাংস এড়িয়ে চলা উচিত।
কেবলমাত্র কমসেদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে যাতে পরিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত
থাকে।
বায়ু নিরোধক ওষুধ
বেশি গ্যাস জমা হলে শিশুদের কিছু বায়ু নিরোধক ওষুধ যেমন- সিমেথিকন খাওয়ানো
যেতে পারে। তবে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী এগুলো গ্রহণ করতে হবে।
যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া
শিশুদের যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাশয় রোগের সময়
তাদের বেশি সময় শুয়ে থাকতে হবে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে
হবে।
সুতরাং আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় এসব উপায় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে
যদি কোন উপসর্গ গুরুতর হয়ে ওঠে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সম্ভব হলে এসব পদ্ধতি অবলম্বন করে আমাশয় রোগের চিকিৎসা করা উচিত। যদি
উপসর্গগুলো গুরুতর হয়ে ওঠে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুদের আরোগ্যলাভের পর আবার নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করতে হবে।
লেখক এর মন্তব্যঃ বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত - বাচ্চাদের আমাশয় হয় কেন
সুতরাং আমাশয় রোগের কারণে বাচ্চাদের যথাযথভাবে খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য পুষ্টিকর ও হালকা খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তরল পান সেবনের ওপরও নজর দিতে হবে। ঘরোয়া উপায়গুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি। এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার বাচ্চার আমাশয় হলে কি কি আপনার করণীয় থাকে
আমাশয়িক উপসর্গ থেকে মুক্তি পেলে বাচ্চাদের নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যাতে তারা সুস্থ থাকতে পারে। তাই বাবা-মায়েদের বাচ্চাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের প্রতি নজর রাখা প্রয়োজন।
প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত বন্ধু সাথে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও এই সকল টিপস গুলো মেনে চলতে পারে। সবাই ভালো থাকবেন আর নিয়মিত আমাদের পোস্টগুলো পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। সবার জন্য শুভকামনা।
বিডি গর্জিয়াস নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url